কক্সবাজারের থেকে দ্বিতীয় দফায় আরও ১১‘শ রোহিঙ্গার ভাসানচর যাত্রা

কক্সবাজারের থেকে দ্বিতীয় দফায় আরও ১১‘শ রোহিঙ্গার ভাসানচর যাত্রা

চঞ্চল দাশগুপ্ত, কক্সবাজার প্রতিনিধি: কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্প থেকে দ্বিতীয় দফায় ২৩টি বাস নিয়ে নোয়াখালীর ভাসানচরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে ১ হাজার ১৩৪জন রোহিঙ্গা।

সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠ থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রোহিঙ্গাদের নিয়ে যাত্রা শুরু করে ১৩টি বাস।এরপর বেলা ৩টার দিকে রওনা দেয় আরও ১০টি বাস। মোট ২৩টি বাসের ১ হাজার ১৩৪জন রোহিঙ্গা আজ (সোমবার) রাতে তাদের চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখান থেকে মঙ্গলবার (২৯ ডিসেম্বর) সরকারি ব্যবস্থাপনায় তাদের জলপথে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হবে।

এর আগে প্রথম দফায় ৩ ডিসেম্বর কক্সবাজারের উখিয়া কলেজ মাঠ থেকে রোহিঙ্গাদের নিয়ে ১১টি বাস ভাসানচরে যায়।রোববার বিকেলে কক্সবাজারের উখিয়া- টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নিয়ে যেতে উখিয়া কলেজ মাঠে অস্থায়ী ট্রানজিট পয়েন্টে রাখা হয়। মূল ক্যাম্প ছাড়াও ৩৪টি ক্যাম্প থেকে ভাসানচরে যেতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গারা রোববার বিকেল ৪টা থেকে ট্রানজিট পয়েন্টে আসতে শুরু করেন। সোমবার সকালেও অনেকে রোহিঙ্গা ট্রানজিট পয়েন্টে আসেন।

ছোট ছোট বাসে করে উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ভাসানচরে যেতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের মাঠে আনা হয়। পরে রোহিঙ্গাদের খাবার দিয়ে গাড়িতে ওঠানো হয়। রোহিঙ্গাবাহী এ বাস বহরে একটি পুলিশের গাড়ি এবং একটি অ্যাম্বুলেন্স সর্বক্ষন থাকে।

জানা গেছে, উখিয়া ও টেকনাফের তালিকাভুক্ত ক্যাম্প ছাড়া বাকি সব ক্যাম্প থেকেই যাচ্ছে রোহিঙ্গারা। উখিয়ার কুতুপালং-১, ২, ৩, ৪, ৫, ৮ ডব্লিউ ক্যাম্প থেকে যাচ্ছে অনেক রোহিঙ্গা পরিবার। উখিয়ার কুতুপালং-৪ নম্বর ক্যাম্প থেকে ২৭ পরিবার যাবে। কুতুপালং-২ ডব্লিউ থেকে যাবে ২৪ পরিবার।

রোহিঙ্গা শরণার্থী ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, হাজারখানেক রোহিঙ্গা আজ ভাসানচরে যেতে পারে। সোমবার সকাল ১১টা এবং বিকাল ৩টায় দুই দফায় ২৩টি বাসে ১ হাজার ১৩৪জন রোহিঙ্গা ভাসানচরের উদ্দেশে রওনা হয়েছে। প্রতিটি বাসে নারী–শিশুসহ ৩৫ জন করে যাত্রী আছে।এ বিষয়ে জানতে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন ধরেননি।

প্রসঙ্গত,কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবির থেকে এক লাখ রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর ভাসানচরে স্থানান্তরের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এরই প্রথম দফায় গত ৪ ডিসেম্বর ১ হাজার ৬৪২ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হয়। ভাসানচরে রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য নিজস্ব তহবিল থেকে ৩ হাজার ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচর আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার।

সেখানে এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। যেখানে রয়েছে শিশুদের খেলার মাঠ, স্কুল, চিকিৎসা কেন্দ্র, দ্বীপে কর্মরত দেশী-বিদেশী সংস্থার লোকজনের জন্য থাকার আলাদা ভবনসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা।

এছাড়া জোয়ার-জলোচ্ছ্বাস থেকে সেখানকার ৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকা রক্ষা করতে ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ১৯ ফুট উঁচু বাঁধ এবং জাতিসংঘের প্রতিনিধিদের জন্য ভবন ও জেটি নির্মাণ করা হয়েছে ভাসানচরে। এছাড়া কক্সবাজারে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয় থেকে ভাসানচরে স্থানান্তরিত রোহিঙ্গাদের জন্য এক বছরের রসদ মজুত করা হবে। এর পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের জন্য নানা ধরনের মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করতে দেশী-বিদেশী ২২টি সাহায্য সংস্থাকে যুক্ত করা হয়েছে।

তবে রোহিঙ্গাদের একটি অংশকে ভাসানচরে সরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়ায় প্রশ্ন তুলেছে জাতিসংঘ। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো এ স্থানান্তর বন্ধের দাবি জানিয়েছে।

বিআলো/শিলি