করোনার দ্বিতীয় ঢেউ, স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই কোথাও

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ, স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই কোথাও

নিজেস্ব প্রতিবেদক : সারাবিশ্বের মতো দেশেও করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু মহামারি এ ভাইরাস নিয়ে মানুষের মধ্যে নেই কোনো ভীতি-উদ্বেগ। সরকার ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ ঘোষণা করেছে; স্বাস্থ্যবিধি মানা ও সামাজিক দূরত্ব রক্ষার প্রচারণা চালাচ্ছে। অথচ সেদিকে কারোরই ভ্রুক্ষেপ নেই। গণপরিবহন, হাট-বাজার, বিপণিবিতান, মার্কেট, লঞ্চ-স্টিমার কোথাও মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না।


মাস্ক পরতে মানুষকে বাধ্য করতে ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে নেমেছে; তবুও হুশ হচ্ছে না সাধারণ মানুষের। সম্প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা, বাস টার্মিনাল, লঞ্চঘাট, রেল স্টেশন ও বিমানবন্দর এলাকা ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।


 

রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। মুখে মাস্ক পরেন না অর্ধেক মানুষ। কেউ কেউ থুতনিতে মাস্ক পরেন। সড়কে বিপুল সংখ্যক ব্যক্তিগত গাড়ি, সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করছে। দাপিয়ে বেড়াচ্ছে রিকশা। কোথাও মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব।

এছাড়াও রাজধানীর অলিগলিতেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কোনো বালাই চোখে পড়েনি। দোকানে দোকানে ভিড় করছেন মানুষ। রবিবার (২২ নভেম্বর) ফকিরাপুল টিএন্ডটি কলোনির কাঁচাবাজারে দেখা যায় মানুষের ভিড়। নিউমার্কেটে, মৌচাক মার্কেটে প্রচন্ড ভিড়। কেউ সামাজিক দূরত্ব মানছেন না। বাজারের ভেতরে মুদি দোকানগুলোতে দেখা যায় ক্রেতাদের ভিড়। ওই দোকানের বাইরে একটি সাদা কাগজে লেখা স্বাস্থ্যবিধি মেনে গোল চিহ্ন দেয়া স্থানে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনুন। কিন্তু ক্রেতাদের কেউই তা মানছেন না। তারা গা ঘেষে দাঁড়িয়ে আছেন। দোকানে থাকা কর্মচারীর মুখে কোনো মাস্ক নেই। বাজারের প্রায় সব দোকানেই একই চিত্র। বাজারের চিত্র দেখে বোঝা মুশকিল যে দেশে করোনাভাইরাস নামে ভয়াবহ কোনো সংক্রমণ ব্যাধি আছে। এখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কোনো দৃশ্যই দেখা যায়নি।


শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, প্রত্যেক যাত্রী মুখে মাস্ক, হাতে গ্লাভস ও স্যানিটাইজার ব্যবহার করলেও সামাজিক দূরত্ব (ন্যূনতম তিন ফুট দূরত্বে অবস্থান) মানা হচ্ছে না। প্রবেশপথ থেকে শুরু করে টার্মিনালের ভেতর এমনকি বিমানে ওঠার সময়ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনা প্রতিপালিত হচ্ছে না।

মহাখালী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা থেকে অন্য জেলাগুলোর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া বাসগুলোতে স্বাস্থ্য বিধি মানার তেমন কোনো তোড়জোড় নেই। যাত্রীদের তোলার সময় কোনোধরনের হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেয়া হচ্ছে না। মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্বও।


ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক উত্তর বিভাগের যুগ্ম কমিশনার আবদুর রাজ্জাক বিবার্তাকে বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রতিটি বাস স্টপেজে মাইকিং করা হচ্ছে। এরপরও যদি কেউ স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলেন, তবে তিনি নিজেই ঝুঁকিতে পড়বেন।

র‌্যাব-৪ এর মিডিয়া কো-অর্ডিনেটর সহকারী পুলিশ সুপার জিয়াউর রহমান চৌধুরী বিবার্তাকে জানান, করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় পর্যায়ের সংক্রমণ ঠেকাতে মিরপুর সরকারি বাংলা কলেজের সামনের এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আনিসুর রহমান। এসময় মাস্ক না পরে বাইরে বের হওয়ায় সাতজনকে দুই হাজার ৩০০ টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া ২০০ দিনমজুর ও রিকশাচালকের মধ্যে মাস্ক বিতরণ করে তাদের সতর্ক করা হয়। করোনাকালে জনসচেতনতা বাড়ানো ও স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে পালনে র‌্যাব-৪ এর অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।


জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ঢাকা জেলার উপজেলাসমূহ এবং মহানগরীর জনবহুল স্থানে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ওয়েভ মোকাবেলায় বাধ্যতামূলক মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করার জন্য জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম, বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে কেরানীগঞ্জ উপজেলায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এর নেতৃত্বে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম ও প্রায় ৩০০ মাস্ক বিতরণ করা হয়।
 

এদিকে মাস্ক না পরায় রাজধানীতে অভিযান চালাচ্ছেন জেলা প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলার বাহিনীর সদস্যরা। প্রতিদিন কোথাও না কোথাও অভিযান চালিয়ে জরিমানা আদায় করা হচ্ছে।

এছাড়া অন্যান্য উপজেলা এবং মহানগরের জজ কোর্ট এলাকা, সিএমএম আদালত এলাকা, বাহাদুর শাহ পার্ক, সচিবালয়, মতিঝিল শাপলা চত্বর, হাতিরঝিল, উত্তরার আজমপুর, খিলক্ষেত, মাসকট প্লাজা, সংসদ ভবন এলাকায় জনবহুল স্থানে ঢাকা জেলা প্রশাসনের ১৭ জন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে মাস্ক ব্যবহারে উৎসাহিত করার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি ও মাইকিং করা হয়। এসময় গরীব/অভাবী লোকদের মধ্যে মোট ১ হাজার ৪০০ মাস্ক বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। এছাড়াও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে মোবাইল কোর্টে ৮৩টি মামলায় ৮৩ জন ব্যক্তিকে মোট ২৪ হাজার ১৮০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মোবাইল কোর্টের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া নির্বাহী ম্যাজিস্টেট আমেনা মারজান বলেন, করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে ঘরের বাইরে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক, আর তা নিশ্চিত করতে সচেতনা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এ সময় জনসাধারণের মাঝে সচেতনা বৃদ্ধি করা হচ্ছে।


বিআলো/শিলি