করোনায় মৃতের সংখ্যা ৫৪ হাজার ছাড়াল

করোনায় মৃতের সংখ্যা ৫৪ হাজার ছাড়াল
ছবি: বিবিসি।

*** যুক্তরাষ্ট্রে ভাঙছে মৃত্যুর রের্কড
*** আসছে করোনার নতুন পরীক্ষা পদ্ধতি
*** যক্ষ্মা ভ্যাকসিনে করোনা চিকিৎসার উপায়
*** মাস্ক পরতে বলছে সিডিসি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সারাবিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ১০ লাখ ১৫ হাজার চারশ ৬৬ জন। তার মধ্যে প্রাণ হারিয়েছে ৫৪ হাজার ৫শ’ ৯০ জনের। বর্তমানে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা সাত লাখ ৫০ হাজার ৪৭ জন। তাদের মধ্যে ৩৭ হাজার ছয়শ ৯৬ জনের অবস্থা গুরুতর।

কেবল যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্ত হয়েছে দুই লাখ ৪৫ হাজার ৬৬ জন। এরই মধ্যে মারা গেছে ছয় হাজার ৭৫ জন এবং গুরুতর অবস্থায় আছে পাঁচ হাজার চারশ ২১ জন। ইতালিতে মারা গেছে ১৩ হাজার নয়শ ১৫ জন এবং স্পেনে মৃতের সংখ্যঅ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার তিনশ ৪৮ জনে। ফ্রান্সে মৃতের সংখ্যা পাঁ হাজার তিনশ ৮৭ জন এবং জার্মানিতে এক হাজার একশ সাতজন।

চীনে ৮১ হাজার পাঁচশ ৮৯ জন আক্রান্ত হলেও সেরে গেছে ৭৬ হাজার চারশ আটজন। সেখানে বর্তমানে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা এক হাজার আটশ ৬৩ জন এবং মারা গেছে মোট তিন হাজার তিনশ ১৮ জন।

যুক্তরাষ্ট্রে ভাঙছে মৃত্যুর রের্কড : সারাবিশ্ব জুড়ে চলছে করোনা তান্ডব। এরই মধ্যে দিনের পর দিন ভয়াবহ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের পরিস্থিতি। গেল ২৪ ঘণ্টায় যুক্তরাষ্ট্রে ১ হাজার ১ শ ৬৯ জনের মৃত্যু রেকর্ড করা হয়েছে, যা বিশ্বে করোনার সংক্রমণে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু। ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ৩০ হাজার মানুষ। যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় এই তথ্যটি নিশ্চিত করেছে। 

এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় ৫ হাজার ৯২৬ জন মারা গেছেন। করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ২ লাখ ৪৩ হাজার মানুষ। নিউ ইয়র্কে সবচেয়ে বেশি আঘাত হেনেছে করোনা। ১ হাজার ৫শ মানুষের বেশি মারা গেছে শুধুমাত্র নিউ ইয়র্ক শহরেই। আক্রান্ত হয়েছে ৫০ হাজার মানুষ। এরই মধ্যে ট্রাম্প বলছেন প্রাণঘাতী করোনায় যুক্তরাষ্ট্রে ১ থেকে ২ লাখ ৪০ হাজার মানুষ মারা যেতে পারে।
এর আগে ইতালিতে করোনার কারণে একদিনে সর্বোচ্চ ৯৬৯ জন মানুষ মারা গেছে। করোনা সবচেয়ে বেশি আঘাত হেনেছে ইতালিতে। মৃত্যুপুরী পরিণত হয়েছে ইতালি। এ পর্যন্ত ১৩ হজার ৯১৫ জন মানুষের মৃত্যু রেকর্ড করা হয়েছে। এ সংখ্যা স্পেনে ১০ হাজার ৩ জন।

এক সপ্তাহের মধ্যেই আসছে করোনার নতুন পরীক্ষা পদ্ধতি : সারা বিশ্ব কাঁপছে করোনা আতঙ্কে। করোনা প্রতিরোধে বিশ্বজুড়ে চলছে তোড়জোড়। এরই মধ্যে অ্যান্টিবডির মাধ্যমে করোনা টেস্টের উন্নয়ন চলছে যুক্তরাজ্যে।

সাধারণত দুই ভাবে কোভিড-১৯ এর টেস্ট করা হয়। প্রথমত মুখের লালা টেস্টের মাধ্যমে দ্বিতীয়ত অ্যান্টিবডি টেস্ট যার উন্নয়নের কাজ চলছে। এর মাধ্যমে সহজেই বলা সম্ভব শরীরে ভাইরাস আছে নাকি নেই।

বিবিসির দেওয়া বিবৃতিতে জানা যায়, এইচআইভি টেস্টের মতই আঙ্গুল থেকে রক্ত নিয়ে পরীক্ষা করা হবে। অ্যান্টিবডি টেস্টের মাধ্যমে জানা যাবে শরীরে ভাইরাস আছে কিনা এবং এ থেকে প্রতিরোধের উপায় কি। বিট্রিশ কম্পানি যারা এইচআইভি নিয়ে কাজ করেছিল তারা বলছে, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই করোনার পরীক্ষা পদ্ধতির উন্নয়ন করা সম্ভব হবে। এরই মধ্যে ব্রিটেন সরকার ৩৫ লাখের মত অ্যান্টিবডি টেস্ট কিট কিনেছে তবে এর যর্থাথতা নিয়ে এখনো প্রশ্ন রয়েছে।

যক্ষ্মার ভ্যাকসিনে করোনা চিকিৎসার উপায় খুঁজছেন বিজ্ঞানিরা : ব্যাসিলাস ক্যালমেট-গেরিন (বিসিজি) ভ্যাকসিন সচরাচর নবজাতকদের দেওয়া হয়। যক্ষ্মা রোগের এই ওষুধ করোনাভাইরাস মোকাবেলায় কাজে দিতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এজন্য ওষুধটি করোনা চিকিৎসায় কাজে দিচ্ছে কিনা, তা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।

ইকোনমিক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন গবেষকরা মনে করছেন করোনায় ‌’গেম চেঞ্জার’ হয়ে উঠতে পারে ভ্যাকসিনটি। এমনকি যেসব দেশে এই ভ্যাকসিন নীতিমালা কঠোরভাবে পালন করা হয়, তার তুলনায় অন্য দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ বেশি বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

নিউইয়র্ক ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির গবেষকরা বলছেন, প্রতিটি ছোট ছোট জিনিসও আশার আলো দেখায়। এখনই কিছু বলা ঠিক হবে না। তবে এই ভ্যাকসিন সার্চ সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কার্যকর বলে প্রমাণ হয়েছিল। 

নিউইয়র্ক ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির অ্যাপ্লাইড মেডিকেল সায়েন্সের ডিন মনিকা গুলাতি বলেন, এটির ব্যবহারে একেবারে সুস্থ হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেনি। তবে এটি ব্যবহারে সার্চ সংক্রমণ অনেকটাই কমেছে। আর সার্চ ভাইরাসের সঙ্গে করোনার অনেকটাই মিল আছে।

তিনি আরো বলেন, যেসব দেশে বিসিজি টিকা দেওয়া হয় নিয়ম মেনে, সেসব দেশে করোনার প্রকোপ অনেকটাই কম আছে। আর এটাই আশার আলো দেখাচ্ছে।

এখন মাস্ক পরতে বলছে সিডিসি : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে মাস্কের গুরুত্ব অপরিসীম বলে উল্লেখ করেছে বিভিন্ন দেশের ডাক্তার-বিশেষজ্ঞরা। তবে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের মাস্ক পরার বিষয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে দেয়া হচ্ছে দুই ধরনের পরামর্শ। একটি পক্ষ বলছে মাস্ক পরা গুরুত্বপূর্ণ, অপর পক্ষ দাবি করছে মাস্ক পরার প্রয়োজন নেই।

ঘরের বাইরে গেলেই মাস্ক অথবা মুখমন্ডল ঢেকে রাখতে পরামর্শ দিচ্ছে দেশটির সেন্টার ফর ডিজেস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)। বিপরীতে দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মাস্ক পরা বাঁধ্যতামূলক নয় বলে পরামর্শ দিচ্ছেন।

যদিও এর আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও সিডিসির পক্ষ থেকে মাস্ক পরার প্রয়োজন নেই বলে জানানো হয়েছিল। তবে সার্জিক্যাল মাস্ক নয়, কাপড়ের মাস্ক পরতে সিডিসির পক্ষ থেকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘কিছু মানুষ এটা পরতে চায় না। এ কারণে আমি মনে করি না যে এটা (মাস্ক) পরা বাঁধ্যতামূলক। তবে কেউ পরতে চাইলে সে পরিধান করতে পারে।’

তিনি বলেন, ’মাস্ক নয় মানুষ স্কার্ফ পরতে চায়। যাদের কাছে এটি আছে তারা এটাই পরতে চায়। অনেক ক্ষেত্রে স্কার্ফটাই ভালো কারণ এটি চিকন।’

তবে দেশটির স্বাস্থ্যকর্মীরা মনে করেন, মাস্ক পরিধানের ফলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির দ্বারা সংক্রমণের ঝুঁকি কম থাকে।

দেশটির করোনাভাইরাস সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেটর ডা. ডেবর্- ব্রিক্স বলেন, ‘আমরা মানুষকে এটা মনে করাতে চাই না যে, মাস্ক পরলেই আমি সুরক্ষিত এবং অন্যকে সুরক্ষা দিচ্ছি। মূলত মাস্ক পরলে কিছুটা ঝুঁকি কমে। তবে এছাড়াও এমন অনেক কিছু আছে যার থেকে ছড়াতে পারে প্রাণঘাতী এ ভাইরাস।’ মাস্ক ছাড়াও মানুষের মাঝে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পরামর্শ দেন তিনি।

ডিসেম্বরের ৩১ তারিখে চীনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত শনাক্তের পর এখন পর্যন্ত মাত্র ৯৫ দিনে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ১৫ হাজার ৫৯ জনে। আর মৃতের সংখ্যা ৫৩ হাজার ১৬৭। আর যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৪৫ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। আর প্রাণ গেছে ৬ হাজার ৭৫ জনের।