কুড়িগ্রামে নদীভাঙনে নিঃস্ব পাঁচ শতাধিক পরিবার: ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমারে তীব্র ভাঙন, আশ্রয়হীন মানুষের হাহাকার
নিজস্ব প্রতিবেদক: বর্ষা শেষ হলেও থামছে না কুড়িগ্রামের নদীভাঙন। জেলার ১৬টি নদ-নদীর মধ্যে ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমার নদের ভাঙন এখন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। গত এক মাসে অন্তত পাঁচ শতাধিক পরিবারের বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
দুধকুমার নদের ভাঙনে নাগেশ্বরী উপজেলার টেপারকুটি, কুড়িগ্রাম সদরের ঘোগাদহ ইউনিয়নের খাড়ুয়ারপাড় ও সবুজপাড়া, এবং যাত্রাপুর ইউনিয়নের বানিয়াপাড়া এলাকা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। অন্যদিকে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে রৌমারী উপজেলার চর শৌলমারী ইউনিয়নের সুখের বাতি, সোনাপুর ও হবিগঞ্জ গ্রামে ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে।
চর শৌলমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছাইদুর রহমান বলেন, ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে সোনাপুর, সুখের বাতি ও হবিগঞ্জ গ্রামের দুই শতাধিক পরিবার ঘরবাড়ি হারিয়েছে। প্রতিদিন অসহায় মানুষ আশ্রয়ের খোঁজে আমার বাড়িতে ভিড় করছে। খাবারের সংকটও দেখা দিয়েছে।
যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর জানান, বানিয়াপাড়ায় শতাধিক পরিবার বসতভিটা হারিয়েছে নদীভাঙনে। এবারের ভাঙন আগের বছরের তুলনায় অনেক ভয়াবহ।
ঘোগাদহ ইউনিয়নের সদস্য খোরশেদ আলম বলেন, দুধকুমার নদীর ভাঙনে খাড়ুয়ারপাড় ও সবুজপাড়ার শতাধিক পরিবার বাড়িঘর হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়ে পড়েছে। এখনো ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।
নাগেশ্বরী উপজেলার কেদার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আ খ ম ওয়াজিদুল কবির রাশেদ জানান, টেপারকুটি গ্রামের প্রায় ৫০টি পরিবার বসতভিটা হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ভোরের আলো ফোটার আগেই নদীর পাড়ে জড়ো হচ্ছেন ভাঙনকবলিত মানুষ। কেউ ঘর সরাচ্ছেন, কেউ গাছ কাটছেন, কেউবা কাঁদতে কাঁদতে নদীর গতি দেখছেন।
সবুজপাড়ার বাসিন্দা শরীফ উদ্দিন বলেন, আমাদের ঘর নদীর তীর থেকে অনেক দূরে ছিল। ভেবেছিলাম এবার রেহাই পাব, কিন্তু এক রাতেই সব গিলে নিল নদী।
অনেকে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন, কেউবা খোলা আকাশের নিচে অস্থায়ী ছাউনি বানিয়ে দিন কাটাচ্ছেন।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আব্দুল মতিন জানান, চলতি বছর ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার, ধরলা, তিস্তা ও গঙ্গাধর নদীর ভাঙনে প্রায় সাড়ে ১৫শ পরিবার বসতভিটা হারিয়েছে।
জেলা চর উন্নয়ন কমিটির সভাপতি বলেন, নদীভাঙনের কারণে চরাঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ দিন দিন বাড়ছে। স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধ করা গেলে তাদের কষ্ট অনেকটা লাঘব হবে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান জানান, ভাঙনকবলিত এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে কাজ চলছে। তবে চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম। পর্যাপ্ত বরাদ্দ পেলে স্থায়ীভাবে কাজ করা সম্ভব হবে।
কুড়িগ্রামের নদীভাঙন যেন এখন নিত্যদিনের ট্র্যাজেডি। প্রতি বছর শত শত পরিবার ঘরবাড়ি হারিয়ে দারিদ্র্য ও বাস্তুচ্যুতির দুষ্টচক্রে পড়ছে। স্থানীয়রা বলছেন, ত্রাণ নয়—এখন সময় এসেছে স্থায়ী বাঁধ ও পরিকল্পিত নদী ব্যবস্থাপনার।
বিআলো/এফএইচএস



