চিরচেনা রুপ ফিরে পেয়েছে বুড়িগঙ্গায়

চিরচেনা রুপ ফিরে পেয়েছে বুড়িগঙ্গায়
চিরচেনা রুপ ফিরে পেয়েছে বুড়িগঙ্গায়
চিরচেনা রুপ ফিরে পেয়েছে বুড়িগঙ্গায়

ইসমাইল হোসেন টিটু: নদী বাঁচলে বাঁচবে দেশ এই কথার বাস্তবতা ফুটেছে বুড়িগঙ্গায়‌। নদীর তীরের কলকারখানাও বন্ধ। পানিতে মিশছে না দূষিত বর্জ্য। মহামারী প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে দেশব্যাপী ছুটির চলছে অঘোষিত লকডাউন। জরুরি সেবা ছাড়া সব কিছু বন্ধ রয়েছে। এতে রাজধানীতে আগের চেয়ে বায়ু দূষণ যেমন কমেছে, সেই সাথে কমেছে নদী দূষণের মাত্রাও। এর ফলে বুড়িগঙ্গা নদী ধীরে ধীরে প্রাণ ফিরে পাচ্ছে। চলছে বর্ষা মৌসুম জোয়ারের পানি আসা যাওয়ায় নদী তার পূর্ণ যৌবনে ফুটে উঠেছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের জরিপ অনুযায়ী নদী দূষণের শতকরা ৮৮ ভাগ কারণ বর্জ্য। ট্যানারি স্থানান্তরিত হওয়ার পর এখনো প্রতিদিন শিল্প কারখানার ৩৫০০ ঘন মিটার এবং অন্যান্য থেকে ২৭০০ ঘনমিটার দূষিত তরল বর্জ্য বুড়িগঙ্গায় মেশে। তবে এবার করোনা মহামারীর কারণে সব কিছু বন্ধ থাকায় নদীটি এসব দূষণ থেকে মুক্ত রয়েছে এবং ধীরে ধীরে প্রাণ ফিরে পাচ্ছে।

মাঝি আব্দুর রহিম বলেন, নদীর পানিতে এখন গন্ধ নেই কোন দূষিত ময়লা নেই নৌকা বাইতে এখন অসুবিধা হচ্ছে না প্রাণ খুলে নিঃশ্বাস নিতে পারছি আমরা।

নৌকার করে যাতায়াতকারী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমার বাসা ওয়ারীতে  ব্যবসা করি কেরানীগঞ্জ কালীগঞ্জে এলাকার পাঁচ বছর যাবত। প্রতি বছরে ভরা মৌসুমে নদীর এই প্রান চঞ্চলতা দেখতে পেয়ে আনন্দ লাগে।কিন্তু কয়েকদিন পর শিল্পকারখানার ময়লা-আবর্জনার ও দুর্গন্ধের কারণে নদীতে যাতায়াত করতে অনেক কষ্ট হয়।

পানিতে জলজ প্রাণী বেঁচে থাকার জন্য প্রতি লিটারে ৬ মিলিগ্রাম দ্রবীভূত অক্সিজেন দরকার। আতিমাত্রার দূষণে বুড়িগঙ্গায় এর মাত্রা শূন্যে নেমে ছিল। ফলে বুড়িগঙ্গায় মাছ বা অন্য কোনো জলজ প্রাণীর অস্তিত্ব ছিল না। তবে সম্প্রতি এক জরিপে বুড়িগঙ্গায় দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা ৫ মিলি গ্রাম পাওয়া গেছে। এতে মাছ বা অন্যান্য জলজ প্রাণীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে মনে করেন প্রাণীবিজ্ঞানী বিশেষজ্ঞরা।

রাজধানী ঢাকাকে নিরাপদ ও বাসযোগ্য রাখতে হলে বুড়িগঙ্গাকে এ রকম করে দূষণমুক্ত রাখতে হবে। তার জন্য অবশ্যই সকল কলকারখানার বর্জ্য শোধনাগার পরিবেশসম্মত করতে হবে। এই লকডাউন থেকে এ বিষয়টি অবশ্যই উপলদ্ধি করতে হবে। এই লকডাউনে এটা প্রমাণ হয়েছে যে কি পরিমাণ শিল্প বর্জ্য প্রতিদিন নদীতে মিশে নদীর জীবন কেড়ে নিচ্ছে। যদি নদী না বাঁচে তাহলে বিপন্ন হবে পরিবেশ, বিপন্ন হবে মানব জীবন। তাই ঢাকাকে বাসযোগ্য রাখতে বুড়িগঙ্গাকে বাঁচানোর কোনো বিকল্প নেই। আর তা করতে হলে সকল কলকারখানার বর্জ্য শোধনাগার অবশ্যই পরিবেশসম্মত আধুনিক করতে হবে।

বুড়িগঙ্গা দূষণের জন্য হাজারীবাগের ট্যানারি শিল্পকে দায়ী করা হতো। এই শিল্প সরিয়ে নেয়ার পরও বুড়িগঙ্গার দূষণ সেভাবে কমেনি। সদরঘাট থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত নদীর দুই পাশ থেকেই অনবরত ফেলা হচ্ছিল বিষাক্ত বর্জ্য। কলকারখানার বর্জ্যরে দূষণে বুড়িগঙ্গায় প্রাণের সঞ্চার হচ্ছিল না। কারখানা বর্জ্য ছাড়াও রাজধানীবাসীর পয়োবর্জ্য ও গৃহস্থালী বর্জ্যের দূষণেও ধুঁকছিল বুড়িগঙ্গা।
পরিবেশ অধিদপ্তরের জরিপ অনুযায়ী নদী দূষণের শতকরা ৮৮ ভাগ কারণ বর্জ্য। ট্যানারি স্থানান্তরিত হওয়ার পর এখনো প্রতিদিন শিল্প কারখানার ৩৫০০ ঘন মিটার এবং অন্যান্য থেকে ২৭০০ ঘনমিটার দূষিত তরল বর্জ্য বুড়িগঙ্গায় মেশে। তবে এবার করোনা মহামারীর কারণে সব কিছু বন্ধ থাকায় নদীটি এসব দূষণ থেকে মুক্ত রয়েছে এবং ধীরে ধীরে প্রাণ ফিরে পাচ্ছে।

প্রাণীবিজ্ঞানীদের মতে পানিতে জলজ প্রাণী বেঁচে থাকার জন্য প্রতি লিটারে ৬ মিলিগ্রাম দ্রবীভূত অক্সিজেন দরকার। আতিমাত্রার দূষণে বুড়িগঙ্গায় এর মাত্রা শূন্যে নেমে ছিল। ফলে বুড়িগঙ্গায় মাছ বা অন্য কোনো জলজ প্রাণীর অস্তিত্ব ছিল না। তবে সম্প্রতি এক জরিপে বুড়িগঙ্গায় দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা ৫ মিলি গ্রাম পাওয়া গেছে। এতে মাছ বা অন্যান্য জলজ প্রাণীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল দৈনিক বাংলাদেশের আলোকে বলেন, বুড়িগঙ্গাকে বাঁচাতে আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি। এখনো অনেক কলকারখানার বর্জ্য বুড়িগঙ্গাকে প্রতিনিয়ত দূষিত করছে। সদরঘাট থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত ছোট-বড় বিভিন্ন রকম কমপক্ষে তিন হাজার শিল্প কারখানা রয়েছে। এগুলো থেকে প্রতিদিন ৩৫০০ ঘনলিটার বর্জ্য বুড়িগঙ্গার পানিতে মিশছে। এতে বুড়িগঙ্গা সেই আগের মতো মৃত থাকছে। এবার লকডাউনের ফলে কলকারখানা বন্ধ থাকায় নদীর দূষণ অনেক কমেছে। তাই নদী দূষণমুক্ত রাখতে হলে এসব কলকারখানার বর্জ্য শোধনাগার অবশ্যই পরিবেশসম্মত করতে হবে। তাহলে নদী তার প্রাণ ফিরে পাবে। দূষণমুক্ত ছাড়াও নদীকে দখলমুক্তও করতে হবে।

নদীতে চলছে না লঞ্চ-স্টিমার। ইঞ্জিনের ভট ভট বা ভোঁ ভোঁ কোনো শব্দ নেই। নদীর তীরের কলকারখানাও বন্ধ। পানিতে মিশছে না কল-কারখানার দূষিত বর্জ্য। শান্ত নদীর বুকে শুধু মৃদু ঢেউয়ের কলকল ধ্বনি। এমন রূপ এখন ঢাকার প্রাণ বুড়িগঙ্গা নদীর।

বিআলো/শিলি