ডায়রিয়া ও করোনা মুক্ত হোক ঈদ যাত্রা

ডায়রিয়া ও করোনা মুক্ত হোক ঈদ যাত্রা

জ,ই বুলবুল: চারিদিকে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েই চলছে। মনে হচ্ছে যেন নতুন আরেক মহামারী। আপাতত কিছুটা করোনা মুক্ত হওয়ার পরে মানব মনে যে স্বস্তি নেমে এসেছিল ডায়রিয়ার প্রকোপ সারা দেশেই বৃদ্ধি পাওয়াতে আবার যেন বিপদের ঘণ্টাধ্বনি বেজে উঠলো।

রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। জাতীয় কলেরা হাসপাতালে প্রতিদিন হাজারের উপরে রোগী ভর্তি হচ্ছে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে। ডায়রিয়াকে নিরীহ রোগ মনে করা হলেও এটি এখন  হয়ে উঠেছে ভয়ঙ্কর রুপে।

তাছাড়া করোনার নতুন ঢেউ-এর ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। এশিয়ার বেশ কিছু দেশ এমনকি প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলছে। মনে রাখতে হবে বিশ্ব এখনো করোনা মহামারী ভিতরেই অবস্থান করছে। আমাদের ঈদের লম্বা ছুটিতে ব্যপোরোয়া যাত্রা, মাক্স না পড়ার কারণে ঈদের পরে হয়তো আবারও বেড়ে যেতে পারে করোনা!  তাই সতর্কতার বিকল্প নেই। 

নিরাপদ খাবার ও পানি গ্রহণ করুন: রাস্তার পাশের বাসি উন্মুক্ত খাবার হতে পারে ডায়রিয়ার জীবাণু বিস্তারের অন্যতম প্রধান মাধ্যম। এসব খাবারের সাথে মিশে থাকে পথের ধুলাবালি। প্রায়ই এসমস্ত খাবারের উপরে দেখা যায় মাছি। মাছি হচ্ছে বিভিন্ন রোগ-জীবাণুর বাহক। যাত্রাপথে এ সমস্ত খাবার পরিহার করা অত্যন্ত জরুরি। বাসি, দুর্গন্ধযুক্ত, পচা খাবার অবশ্যই পরিহার করতে হবে।  রাস্তার পাশের উন্মুক্ত হোটেল থেকে খাবার গ্রহণ করা একেবারেই ঠিক হবে না। যাত্রাপথ দীর্ঘ হলে অবশ্যই সাথে করে নিরাপদ খাবার বাসা থেকে তৈরি করে নিয়ে যেতে হবে। সাথে নিতে হবে নিরাপদ পানি। রাস্তার আশেপাশে থেকে অনিরাপদ পানি গ্রহণ ভয়ানক বিপদ থেকে আনতে পারে। মনে রাখা দরকার ডায়রিয়া, কলেরা পানি  এবং খাদ্য বাহিত একটি রোগ। গরমের মৌসুমে ঠান্ডা পানি পান করার একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। অনেক সময় পানির সাথে বরফ মিশিয়ে তা ঠান্ডা করা হয়। অজানা উৎস থেকে তৈরি বরফ অবশ্যই ব্যবহার করা যাবে না। কারণ এর মাঝে লুকিয়ে থাকে প্রাণসংহারী জীবাণু।

করোনার পদধ্বনি ও করণীয়: করোনার সাধারণ০০০ সতর্কতামূলক নিয়মকানুনগুলো অবশ্যই মেনে চলতে হবে। এক্ষেত্রে মাস্ক পরিধান করা খুবই জরুরী। এ বছর যাত্রা পথে খুব কম সংখ্যক মানুষের মুখে দেখা যাচ্ছে মাস্ক। নিয়মিত হাত ধোয়ার অভ্যাস জারি রাখতে হবে। খাদ্য তৈরি করার সময়, খাদ্য খাওয়ার সময় এবং টয়লেট ব্যবহার করার পর অবশ্যই সাবান দিয়ে অন্তত  বিশ সেকেন্ড ভালোভাবে হাত ধৌত করতে হবে। একথা বলাই বাহুল্য হাত ধৌত করার জন্য অবশ্যই নিরাপদ পানি ব্যবহার করতে হবে। এটি একদিকে করোনা অন্যদিকে ডায়রিয়ার জীবাণু বিস্তারে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করবে। হাঁচি-কাশির সময় অবশ্যই নাকে মুখে রুমাল ব্যবহার করতে হবে। 

সঙ্গে রাখুন প্রয়োজনীয় ওষুধ: যাত্রাপথে কখনো দীর্ঘ সময় লেগে যেতে পারে।বিশেষ করে ফেরিঘাটে যানজটে আটকে থাকার কারণে অনেক সময় ঘন্টার পর ঘন্টা অতিরিক্ত সময় লেগে যেতে পারে। যাত্রাকালীন সময় এ বিষয়টি অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। যারা ডায়াবেটিস, হৃদরোগ কিংবা উচ্চ রক্তচাপের জন্য নিয়মিত ঔষধ সেবন করছেন তারা যাত্রাপথে অবশ্যই তাদের ঔষধগুলো একটি ছোট্ট বক্সে রাখবেন যাতে সময় মতো বের করে তা সেবন করা যায়। ইনসুলিন সহ কিছু ঔষধ আলোর সংস্পর্শে থাকলে গুনাগুন নষ্ট হয়ে যায়। এ সমস্ত ওষুধ যাত্রার সময় নিরাপদ স্থানে রাখতে হবে।

অসুস্থ হলে দ্রুত চিকিৎসা নিন: যাত্রাপথে কিংবা বাড়িতে ঈদ উদযাপনের সময় ডায়রিয়ার লক্ষণ প্রকাশ পেলে দ্রুত চিকিৎসা নিন। খেয়াল রাখতে হবে যাতে পানিশূন্যতা না হয়। ডায়রিয়ায় পানিশূন্যতা থেকে কিডনি বিকল হয়ে যেতে পারে। সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম সহ বিভিন্ন লবণের ঘাটতি মারাত্মক জটিলতা তৈরি  করতে পারে। জ্বর-কাশি, সর্দি, গলা ব্যথা, স্বাদ ও ঘ্রাণ কমে গেলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। 

লেখক: লে. কর্ণেল ডা: নাসির উদ্দিন আহমদ, মেডিসিন স্পেশালিস্ট ও এন্ডােক্রাইনােলজিস্ট, সিএমএইচ,ঢাকা। 
চেম্বার :আল রাজি হাসপাতাল (২ য় তলা) ফার্মগেট, ঢাকা।
মোবাইলঃ ০১৭৫৬-১৭৩-৭৬৫, ০১৭২৬-০৫০-৯১২।

বিআলো/শিলি