ঢাকা বোট ক্লাবের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় সভাপতি পদে প্রার্থী নাছির মাহমুদ
ফয়সাল আহাম্মেদ রিয়াদ: ঢাকা বোট ক্লাবকে দেশের শীর্ষস্থানীয় আধুনিক সামাজিক ক্লাবে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে চলমান উন্নয়ন কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ২০২৫-২৬ মেয়াদের নির্বাচনে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান সভাপতি নাছির মাহমুদ। তার নেতৃত্বে গত দুই বছরে ক্লাবটি অবকাঠামো, সাংগঠনিক দক্ষতা, আর্থিক স্বচ্ছতা ও সাংস্কৃতিক প্রাণচাঞ্চল্যে নতুন এক ইতিবাচক পরিবর্তনের পথে অগ্রসর হয়েছে বলে জানা গেছে। কুঞ্জো ডেভেলপার্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান নাছির মাহমুদ বলেন, ঢাকা বোট ক্লাব শুধু বিনোদনের স্থান নয়, এটি সদস্যদের স্বপ্ন, ভালোবাসা, বন্ধুত্ব ও পারিবারিক সম্পর্কের প্রতীক। তিনি জানান, ২০০৪ সালে নর্দান ফ্রেন্ডস অ্যান্ড এসোসিয়েটস-এর উদ্যোগে ক্লাব প্রতিষ্ঠার সূচনা হয় এবং ২০১৪ সালের ৩০ জুন সাত সদস্যের উদ্যোগে ক্লাবের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়।
সেই সময় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পেরে তিনি গর্বিত বলে উল্লেখ করেন। জমি ক্রয়, ড্যাপ অনুমোদন, বালি ভরাট ও নির্মাণ কাজসহ বিভিন্ন দপ্তর থেকে অনুমোদন আদায়ে দেড় বছর ব্যাপী পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি প্রয়োজনীয় সকল অনুমোদন নিশ্চিত করেন। পরবর্তীতে তিন সদস্যের উন্নয়ন কমিটির তত্ত্বাবধানে নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে পূর্ণাঙ্গ ক্লাব ভবন চালু করা সম্ভব হয়। নাছির মাহমুদ অভিযোগ করেন, একটি পক্ষের ব্যক্তিস্বার্থ রক্ষার কর্মকাণ্ড, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অন্যায় আচরণের ফলে তাকে প্রায় তিন বছর ক্লাবে প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়, যা ক্লাবের গণতান্ত্রিক কাঠামোর ওপর আঘাত হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন। পরে ধারাবাহিক আইনি লড়াই, উকিল নোটিশ ও দাবির মুখে ২০২৪ সালের ২১ সেপ্টেম্বর ক্লাবে প্রথমবার সুসংগঠিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যা তিনি সদস্যদের অধিকার ও ন্যায়ের বিজয় বলে উল্লেখ করেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রশাসনিক, হিসাবনিকাশ, কর্মী ব্যবস্থাপনা, স্টোর, প্রকৌশল ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগে অনিয়ম চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া, দুর্নীতি বন্ধ এবং পুনর্গঠনের মাধ্যমে ক্লাবকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন বলে তিনি দাবি করেন। গত ১৪ মাস প্রায় প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ব্যক্তিগত সময় ব্যয় করে ক্লাবের ভাঙা প্রশাসনিক অবস্থা পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেন।
তার নেতৃত্বে গত এক বছরে সম্পন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের মধ্যে রয়েছে ঢাকা শহরের বৃহৎ কাঁচঘেরা স্থাপনা ‘অ্যাম্বার লাউঞ্জ’, ‘স্কাই লাউঞ্জ’ ও ‘গ্লাস হাউস-২’ নির্মাণ, নতুন বিশজন ধারণক্ষম ক্যাপসুল লিফট স্থাপন, নতুন ভবন নির্মাণ ও নতুন জেনারেটর ও সাবস্টেশন স্থাপন, রিভার ভিউ গার্ডেন, ওয়াটার ফাউন্টেন, কিডস জোন, নতুন জেটি নির্মাণ ও পাঁচটি বোটসহ নৌবিহার চালু, আন্তর্জাতিকমানের বিলিয়ার্ড কক্ষ, নদীপাড়ে বাগান ও সবুজায়ন, টাইলস ও গ্রানাইট নির্মাণসজ্জা, নতুন লন্ড্রি ইউনিট ও গার্ড শেড নির্মাণ। এছাড়া প্রায় পাঁচ দশমিক পাঁচ লাখ বর্গফুট আয়তনের নতুন ভবনের নকশা রাজউকের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
এ ছাড়া প্রথমবারের মতো ক্লাবের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক আয়োজন যেমন দুইবার ঢাকা-চাঁদপুর-ঢাকা রিভার ক্রুজিং, বার্ষিক পিকনিক, ইফতার, পহেলা বৈশাখ, ঈদ পুনর্মিলনী, মেহেদি উৎসব, প্রেসিডেন্ট নাইট, মেম্বারস নাইট, পূর্ণিমা সংগীত সন্ধ্যা, পিঠা উৎসব, স্নুকার প্রতিযোগিতা, কার্ড প্রতিযোগিতা এবং আন্তঃক্লাব অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ আয়োজন করা হয় যা ক্লাবকে নতুন গতি প্রদান করেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। নাছির মাহমুদ বলেন, ঢাকা বোট ক্লাবকে আরো ঐক্যবদ্ধ, আধুনিক, মর্যাদাবান ও সদস্যবান্ধব প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে উন্নয়ন কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা জরুরি। স্বল্প সময়ে এই কাজ শেষ করা সম্ভব নয়।
তিনি সদস্যদের সহযোগিতা, ভালোবাসা ও আস্থা চেয়ে পুনরায় সভাপতি পদে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেন। তার বক্তব্য অনুযায়ী, আমরা সবাই মিলে নির্মাণ করব একটি ঐক্যবদ্ধ, আধুনিক, মর্যাদাবান ও গর্বিত ঢাকা বোট ক্লাব। উলেখ্য, কুঞ্জো ডেভেলপার্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের ১৯৮১ ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী সালমান মাহমুদ বর্তমানে ঢাকা বোট ক্লাবের ২০২৪-২০২৫ মেয়াদের প্রথম নির্বাচিত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ক্লাবটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও নির্বাহী কমিটির দায়িত্বে ছিলেন এবং ২০১৬ সাল থেকে বর্তমান ভবন নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা তিন সদস্যের ডেভেলপমেন্ট কমিটির সদস্য ছিলেন।
এর আগে উত্তরা ক্লাবে পরপর তিন মেয়াদে (২০১৪-১৫, ২০১৫-১৬, ২০১৬-১৭) সভাপতি এবং প্রশাসন, বার ও মেইনটেন্যান্সসহ বিভিন্ন পদে নির্বাচিত হয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সামাজিক ও পেশাগত অঙ্গনে তার ভূমিকার মধ্যে রয়েছে ডাকসু এসএম হলের সাবেক নির্বাচিত মহাসচিব (১৯৮১-৮২), ঢাকা প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগের সাবেক ফুটবলার, লায়ন্স ক্লাব অব ঢাকা ক্যাপিটালের সাবেক সভাপতি ও লায়ন্স ক্লাবস ইন্টারন্যাশনাল ডিস্ট্রিক্ট ৩১৫-বি’র জোন চেয়ারপারসন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের আজীবন সদস্য ও সিনেট সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন।
তিনি রিহ্যাব সদস্য এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ফর কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক নির্বাহী কমিটি সদস্য। বর্তমানে তিনি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত এবং উত্তরা, গুলশান, বনানী, বারিধারা ও সিলেটসহ দেশের নামকরা অন্তত ১৮টি ক্লাবের সক্রিয় সদস্য।
বিাআলো/ইমরান



