দিনাজপুরে ব্লাস্ট রোগের প্রাদুর্ভাব, নষ্ট হচ্ছে লক্ষাধিক হেক্টর জমির ধান

দিনাজপুরে ব্লাস্ট রোগের প্রাদুর্ভাব, নষ্ট হচ্ছে লক্ষাধিক হেক্টর জমির ধান

দিনাজপুর প্রতিনিধি: দিনাজপুরে ১ লাখ ৬৫৪ হেক্টর জমির সুগন্ধি ব্রি-৩৪ ( জিরা কাটারী) ধানে ব্লাস্ট রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। যে সময় ক্ষেতে সবুজের সমারোহ দেখা যাওয়ার কথা, সে সময় পাতা সোনালী রঙ ধারণ করেছে। এ অবস্থায় কৃষি বিভাগ আগামীদিনে এই সুগন্ধি ধান চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করাসহ মাঠ থেকে একেবারে তুলে নেয়ার কথা ভাবছে। 

সরেজমিনে দেখা গেছে ক্ষেতে ব্লাস্টসহ নানান রোগের প্রকোপ মারাত্মক রূপে ধারণ করেছে। যে সময় ধান ক্ষেতে সবুজের সমারোহ থাকার কথা, সে সময় সোনালী রঙ ধারণ করেছে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। শীষ বের হয়ে দানা না হতেই দুধ অবস্থায় শুকিয়ে যাচ্ছে। কীটনাশক প্রয়োগেও কোনো প্রতিকার খুঁজে পাচ্ছেন না কৃষকরা। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা। 

বিরলের ধামইর ইউপির দারইল গ্রামের কৃষক মমতাজ আলী মাষ্টার জানান, ৪ একর জমিতে এবার ব্রি-৩৪ (জিরা কাঠারী) আবাদ করেছেন। কিন্তু শেষ সময়ে এসে ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে ক্ষেত। কৃষি বিভাগের কোনো কর্মকর্তাকে না পেয়ে স্থানীয় দোকান থেকে কীটনাশক সংগ্রহ করে স্প্রে করেছেন। কিন্তু এর আগেই অনেক ফসল আক্রান্ত হয়ে পড়ায় তা আর কোনো কাজে আসছে না। 

একই এলাকার কৃষক সুশীল চন্দ্র রায় জানান, তিনিও ৪ বিঘা জমিতে এই ধান চাষ করেছেন। কিন্তু ব্লাস্ট রোগের আক্রমণে ধান নষ্ট হয়ে গেছে। এলাকায় আগে একজন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা এলেও এখন কে দায়িত্বে আছেন তা জানেন না। একই এলাকার কৃষক আবদুল জানান, ৫ একর জমির মধ্যে হঠাৎ ব্লাস্ট রোগ ছড়িয়ে পড়ায় তিনি দিশেহারা হয়ে পরেছেন। খানসামা উপজেলার কৃষক আমিনুল ইসলাম জানান, তিনিও ব্রি-৩৪ ধানের চাষ করে বিপাকে পড়েছেন। কৃষি বিভাগ ধানের শীষ বের হওয়ার আগেই কীটনাশক স্প্রে করতে বলেছিলেন। কিন্তু তা করা হয়নি। ফলে ব্লাস্ট রোগ থেকে ধানক্ষেত বাঁচাতে পারেননি। 

কৃষি বিভাগের একটি সূত্র জানায়, বিপিএইচ এবং ব্লাস্ট রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে প্রায় ৬০ হাজার লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে সঠিক সময়ে সঠিক পরামর্শ প্রদান অব্যাহত রয়েছে। 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দিনাজপুরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. তৌহিদুল ইকবাল জানান, ব্রি-৩৪ ধানে ব্লাস্ট রোগের ব্যাপক প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। আমরা কৃষকদেরকে শীষ বের হওয়ার আগে প্রভেক্স ও সিনাইল নামে দুটি কীটনাশক মিশিয়ে স্প্রে করার পরামর্শ দিয়েছিলাম। যারা করেছে তাদের ধানে ব্লাস্ট রোগ আক্রমণ করেনি। 

তিনি আরও জানান, ব্রি-৩৪ ধানে ব্লাস্ট রোগ আক্রমণের কারণ বীজ। এই ধানের বীজ নষ্ট হয়ে গেছে। আগামীতে এই ধান তুলে নেয়া হবে। এবার দিনাজপুরে মোট ২ লাখ ৫৯ হাজার ৩৩ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সুগন্ধি ধান ব্রি-৩৪ চাষ হয়েছে ১ লাখ ৬৫৪ হেক্টর জমিতে।