দুধ উৎপাদনে দেশি না বিদেশি-খামারিদের মতভেদ
মো. তরিকুল ইসলাম (মোস্তফা),বাউফল (পটুয়াখালী): দেশে দুধ উৎপাদনে দেশি গরু ভালো নাকি বিদেশি—এই বিষয়ে খামারিদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ভিন্নমত রয়েছে। মাঠের অভিজ্ঞতায় কেউ দেশি গরুকে ভালো বলেন, আবার কেউ বিদেশি গরুকে বেশি লাভজনক মনে করেন। বিদেশি গরু দুধ বেশি দেয়, আর দেশি গরু দুধ দেয় কম; তবে দেশি দুধ ঘন, সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর।
বাউফলের হাওলাদার এগ্রো ফার্মের মালিক মোঃ উজ্জল বলেন, দেশি গরুর দুধ বেশি ভালো এবং ঘন। অন্যদিকে বিদেশি গরু বেশি দুধ দিলেও তা তুলনামূলক পাতলা। তিনি জানান, গরমে বিদেশি গরুকে রাখতে সমস্যা হয়, যত্ন কম হলে দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং তাদের খাবারের খরচও বেশি। দেশি গরু কম রোগে পড়ে এবং সহজ চিকিৎসাতেই ভালো হয়ে যায়।
প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর বিদেশি জাতের সিমেন আমদানির কারণে দেশি গরুর সংখ্যা কমছে। এতে দেশি জাত বিলুপ্তির আশঙ্কা বাড়ছে।
শ্রীনগরের খামারি মোঃ স্বপন বলেন, চরভূমি কমে গেছে এবং শুষ্ক মৌসুমে ঘাস–খড়ের দাম বেড়ে যাওয়ায় গরু লালন-পালন কঠিন হয়ে পড়ছে।
তবুও বাজারে দেশি দুধের চাহিদা কমেনি। মানুষ এখনও দেশি দুধের স্বাদ ও গন্ধের জন্য তা বেশি পছন্দ করে।
সরকার কৃত্রিম প্রজনন, টিকা কার্যক্রম ও ভেটেরিনারি সেবা দিচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশি জাত রক্ষায় আরও উদ্যোগ প্রয়োজন—যেমন উন্নয়ন কেন্দ্র, সাশ্রয়ী খাদ্য সহায়তা, খামারিদের প্রশিক্ষণ এবং সহজ ঋণ সুবিধা।
খামারি মো. আজহার মিয়া বলেন, “আগে আমাদের গ্রামে অনেক দেশি গরু ছিল। এখন সেগুলো খুব কম দেখা যায়।”
দেশি গরু শুধু দুধের উৎস নয়; এটি গ্রামীণ অর্থনীতি, পুষ্টি এবং কৃষি ঐতিহ্যের অংশ। বিদেশি জাতের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা ভবিষ্যতে স্বাস্থ্য ও অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই দেশি জাত সংরক্ষণ এখন জরুরি।
বিআলো/ইমরান



