দেড় দশক পর ছোট পর্দায় ঝলমলে প্রত্যাবর্তন আইরিন সুলতানার
‘মধু’ চরিত্রে আইরিন—চলচ্চিত্র নায়িকার বাস্তব অভিজ্ঞতা এবার ছোট পর্দায়
- দেড় দশক পর আবার ধারাবাহিকে অভিনয়, টিআরপিতে শীর্ষে ‘মহল্লা’।
নতুন সিনেমা প্রায় চূড়ান্ত।
ব্যক্তিজীবনের নতুন অধ্যায় আসবে হঠাৎই—দাওয়াত নাও মিলতে পারে!
র্যাম্পের ঝলমলে আলো থেকে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানো—আইরিন সুলতানার পথচলা যেন ঠিকঠাক এক শোবিজ গল্পের মতো। যশোরের মেয়ে তিনি। ২০০৮ সালে ‘ইউ গট দ্য লুক’ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে এক ঝলকে পরিচিত হন পুরো দেশে। বিজ্ঞাপনচিত্র দিয়ে শুরু হওয়া যাত্রা দ্রুতই তাঁকে নিয়ে যায় নাটক, তারপর বড় পর্দায়। আফসানা মিমির ‘পৌষ ফাগুনের পালা’ দিয়ে অভিনয়ে আত্মপ্রকাশ, আর দেবাশীষ বিশ্বাসের ‘ভালোবাসা জিন্দাবাদ’ দিয়ে চলচ্চিত্রে অভিষেক—তারপর একে একে বহু সিনেমায় অভিনয়।
দীর্ঘ বিরতির পর আবারও ছোট পর্দায় ফিরে এসেছেন তিনি বৈশাখী টেলিভিশনের জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘মহল্লা’ দিয়ে। নতুন চরিত্র, নতুন প্রাণ—আর দর্শকের আগ্রহও তুঙ্গে। নিজের ক্যারিয়ার, স্মৃতি, বর্তমান ব্যস্ততা আর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে অকপট কথায় ভরিয়ে দিলেন আমাদের আজকের এই বিশেষ সাক্ষাৎকার।
ক্যারিয়ারের বাঁকবদল, স্মৃতি, ব্যক্তিজীবনের পরিকল্পনা, কাজের বর্তমান বাস্তবতা—সব নিয়ে কথা বললেন হ্নদয় খানের সঙ্গে..

পনেরো বছর পর আবার ধারাবাহিকে—কেমন লাগছে?
হিসেব কষে দেখলাম—হ্যাঁ, প্রায় পনেরো বছরই হয়ে গেছে। শেষ ধারাবাহিক ছিল ২০১০ সালে, আফসানা মিমি আপার পরিচালনায় ‘পৌষ ফাগুনের মেলা’। এরপর আর কোনো ধারাবাহিকে কাজ করা হয়নি।
এত দীর্ঘ বিরতি কেন?
২০১১ সালের পর থেকেই চলচ্চিত্রে ব্যস্ত হয়ে গেলাম। দেবাশীষ বিশ্বাস দাদার ‘ভালোবাসার জিন্দাবাদ’–এ যুক্ত হওয়ার পর একে একে ‘টাইম মেশিন’, ‘এই তুমি সেই তুমি’, ‘ছেলেটি আবোল তাবোল মেয়েটি পাগল পাগল’, ‘ইউটার্ন’, ‘এক পৃথিবী প্রেম’—বেশ কিছু ছবির কাজ হাতে আসে। ফলে ধারাবাহিক করার মতো সময় থাকত না।
আর তখন চলচ্চিত্র অঙ্গনে ছোট পর্দার অভিনেত্রীদের নিয়ে একটা হেজিটেশন ছিল। অনেকেই পরামর্শ দিয়েছিলেন ছোট পর্দা পুরোপুরি ছেড়ে দিতে। আমি সেভাবেই পুরোপুরি বড় পর্দাকেন্দ্রিক হয়ে যাই।
‘মহল্লা’য় যুক্ত হওয়ার গল্পটি কী?
নির্মাতা ফরিদুল হাসান ভাই প্রস্তাব দেন। গল্প শোনার পর খুব ভালো লাগে। আমার চরিত্র মধু—একজন চলচ্চিত্র নায়িকা, পুরান ঢাকার মেয়ে। বাস্তবেও তো আমি চলচ্চিত্রে কাজ করি, ঢাকায় আছি দুই দশকের বেশি সময় ধরে। চরিত্রটিকে নিজের মতো করে ফুটিয়ে তোলার সুযোগ আছে মনে হয়েছিল। তাই কাজটি করি।
দর্শকদের সাড়া কেমন?
খুব ভালো। নায়িকাদের পর্দার বাইরের জীবন কেমন—এ নিয়ে মানুষের আলাদা কৌতূহল থাকে। নাটক প্রচারের পর সেটা আরও বুঝতে পারছি। লেখক বিদ্যুৎ রায় দাদার গল্প ও সংলাপ দুটোই দারুণ। চ্যানেল থেকেও জানানো হয়েছে—‘মহল্লা’ এখন টিআরপিতে শীর্ষে। আমাদের পুরো টিমকে অভিনন্দনও জানানো হয়েছে।
নতুন কোনো চলচ্চিত্র?
একটি ছবি প্রায় চূড়ান্ত। শুধু আনুষ্ঠানিক ঘোষণা বাকি। সহশিল্পী থাকছেন আব্দুন নূর সজল। তবে পরিচালক বা ছবির নাম আপাতত বলছি না—সময়ের অপেক্ষা।
চলচ্চিত্র–ব্যস্ততার দিনগুলো কি মিস করেন?
অবশ্যই করি। তখন প্রতিদিনই শুটিং, ডাবিং, মিটিং—নানারকম কাজ। এখন কাজ কম, অস্থিরতা চারদিকেই। তবে মানিয়ে নিতে হয়। বোরিং সময় না—কারণ আমি প্রায়ই ঢাকার বাইরে প্রকৃতির মাঝে চলে যাই। গত সপ্তাহেই জয়দেবপুরে দুই দিন কাটিয়ে এলাম। সবুজ ঘাস, খালি পায়ে হাঁটা—মন ভালো করে দেয়। ঢাকায় থাকলে বই পড়ি, হ্যান্ডিক্রাফট করি, রান্না করি—এভাবেই সময় কাটাই।

বিয়ে… নিয়ে পরিকল্পনা কি—কখন?
হাহাহা! এটা তো বলে দেওয়া যায় না। আমার জীবনে কিছুই পরিকল্পনা করে হয়নি—র্যাম্প, নাটক, চলচ্চিত্র—সবই যেন নিজে থেকেই হয়েছে। তেমনি কোনো একদিন হঠাৎই বিয়ের পিঁড়িতে বসে যাবো—দাওয়াতও হয়তো পাবেন না! পরিবার চাপ দিচ্ছে ঠিকই, কিন্তু আমি বলেছি—জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে—এ তিনটি বিষয় সম্পূর্ণ সৃষ্টিকর্তার হাতে।
এখন কি নিয়ে ব্যস্ত, নতুন কী কাজ করছেন?
ইতিমধ্যে কয়েকটি একক নাটক করেছি, সামনে আরও করব। অনেকে ভাবতেন আমি হয়তো আর ছোট পর্দায় ফিরব না। সেই ধারণা বদলাতেই এবার ছোট পর্দায় ব্যস্ত হয়েছি।
আসছে রোজার ঈদে অন্তত দশটি একক নাটকে আমাকে দেখা যাবে।
একটি গানের মডেলও হয়েছি—পুলক অধিকারির ‘আমার হতে বলছি না’ গানটিতে। এর আগে মাত্র দুটি গানে মডেল হয়েছিলাম। কাজী শুভর ‘মেলা থেকে বউ এনে দে’ তো ভীষণ হিট হয়েছিল—ইউটিউবে সাড়ে চার কোটির বেশি ভিউ। আকাশ সেনের ‘সুইটি’ গানটাও কোটি ভিউয়ের কাছাকাছি। আশা করি নতুন গানটিও দর্শকের ভালো লাগবে।
বিআলো/তুরাগ



