দেশের ৬৯ শতাংশ শিশুশ্রমিক পরিবারের বসবাস দারিদ্র্যসীমার নিচে: গবেষণা তথ্য
শহরাঞ্চলে শিশুশ্রম নির্মূলে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের প্রতি গুরুত্বারোপ
বিশেষ প্রতিনিধি: দেশের ৬৯ শতাংশ শিশুশ্রমিক পরিবার দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। অন্য যে কোন দেশের থেকে বাংলাদেশে শিশুশ্রমের হার বেশি। বিশ্বব্যাপী ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশু জনসংখ্যার ৭.৮ শতাংশ শিশুশ্রমে নিযুক্ত থাকলেও বাংলাদেশে ৯.২ শতাংশ শিশু শ্রমের নিয়োজিত আছে। ওই সকল শিশুদের মধ্যে ৪৭.৬৮ শতাংশ সপ্তাহে সাত দিন এবং ৪৬.৩৬ শতাংশ সপ্তাহে ছয় দিন কাজ করে। শিশু শ্রমিকদের সবচেয়ে বেশি ২৮.৪৮ শতাংশ পোশাক খাতসহ অন্যান্য শিল্পে ও উৎপাদন কাজে জড়িত।
উন্নয়ন সংস্থা ‘এডুকো’র গবেষণায় ওই তথ্য উঠে এসেছে।
আজ বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘নগর প্রেক্ষাপটে শিশুশ্রম : বাংলাদেশে সামাজিক-অর্থনৈতিক কারণ ও টেকসই কৌশলগত সমাধান বিশ্লেষণ’ শীর্ষক ওই গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন গবেষক দলের প্রধান আমিনুর রহমান।
গবেষণা প্রতিবেদনের সুপারিশে শহরাঞ্চলে শিশুশ্রম নির্মূলে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের প্রতি গুরুত্বারোপ করে বলা হয়েছে, শিশুশ্রম প্রতিরোধ ও পুনর্বাসনে সরকারের পাশাপাশি এনজিও এবং উন্নয়ন অংশীদাররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও টেকসই কর্মপরিকল্পনার অভাব রয়েছে। তাই শিশুশ্রম নির্মূলের উদ্যোগগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বৃহত্তর নগর উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং আবাসন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও জলবায়ু অভিযোজন কৌশল নির্ধারণ করতে হবে।
এডুকো বাংলাদেশ ও চাইল্ড লেবার ইলিমিনেশন প্ল্যাটফর্ম (ক্ল্যাপ) আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এডুকো বাংলাদেশের ব্যবস্থাপক আফজাল কবির খান। তিনি বলেন, শিশুশ্রম নির্মূল করতে হলে সরকারি সংস্থা, স্থানীয় সরকার, সুশীল সমাজ, বেসরকারি খাত এবং কমিউনিটির মধ্যে শক্তিশালী সমন্বয় প্রয়োজন। একইসঙ্গে কার্যকর হস্তক্ষেপ নিশ্চিত করতে প্রমাণভিত্তিক নীতিনির্ধারণ এবং শিশুকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি গুরুত্বপূর্ণ। এই গবেষণার ফলাফলকে বাস্তবভিত্তিক ও কার্যকর কৌশলে রূপান্তরের মাধ্যমে শিশুশ্রম প্রতিরোধ এবং বাংলাদেশে নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও শিশুবান্ধব নগর পরিবেশ গড়ে তোলা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক বলেন, সরকারের এককভাবে শিশু নিরসন সম্ভব না, কোনো সংস্থাও এককভাবে এটা নিরসন করতে পারবে না, এটা সামষ্টিক কাজ। এ কাজে করপোরেট খাতকে সঙ্গে নিয়েই অগ্রসর হতে হবে। বড় বড় কোম্পানির সিএসআর তহবিল থেকে যদি নির্দিষ্ট একটি অংশ শিশুশ্রমের জন্য বরাদ্দ করা যায়, তাহলে বাস্তব পরিবর্তন সম্ভব। সম্মিলিত সামাজিক উদ্যোগ শিশুদের অধিকার নিশ্চিত করতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়েরউপসচিব আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, দেশে শ্রম আইন, জাতীয় শিশুশ্রম নিরসন নীতি, গৃহকর্মী সুরক্ষা নীতি এবং সংবিধানসহ আন্তর্জাতিক কনভেনশনসহ বহু নীতি থাকলেও সমস্যা বাস্তবায়নে। বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে নারী ও শিশু, শিক্ষা, শ্রম, স্বরাষ্ট্রসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি। পাশাপাশি ঋণের ফাঁদে পড়া পরিবারগুলোকে সুরক্ষার আওতায় আনা প্রয়োজন।
জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সীমা জহুর বলেন, সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও নমনীয় শিক্ষায় প্রবেশাধিকার বৃদ্ধি, ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারগুলোর জন্য নগরভিত্তিক জীবিকায়নের সুযোগ সম্প্রসারণ এবং কমিউনিটি-ভিত্তিক শিশুসুরক্ষা ব্যবস্থাকে জোরদার করতে হবে। এছাড়া নগর শিশুশ্রম টেকসইভাবে মোকাবিলার জন্য সমন্বিত ও বহুমুখী খাতভিত্তিক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
বিআলো/তুরাগ



