নদী ছিল স্বাধীনতার গোপন সহযোদ্ধা: এফ এইচ সবুজ
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে শুধু স্থলভিত্তিক যুদ্ধ হিসেবে দেখলে ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় অপূর্ণ থেকে যায়। বাস্তবতা হলো-নদীমাতৃক এই দেশের বিজয় এসেছিল অনেকটাই নদীপথ ধরে। আমাদের অগণিত নদ-নদী মুক্তিযুদ্ধের সময় ছিল নীরব কিন্তু কার্যকর সহযোদ্ধা, যারা বিজয়ের পথ প্রশস্ত করেছে।
নদীপথ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য তৈরি করেছিল নিরাপদ যোগাযোগব্যবস্থা। এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে অস্ত্র, রসদ ও গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে এই জলপথ ব্যবহার করেই। শত্রু বাহিনী যখন সড়ক ও স্থলপথে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছে, তখন নদীর আঁকাবাঁকা পথ ও চরাঞ্চল তাদের কৌশল ব্যাহত করেছে।
নদী শুধু যোগাযোগের মাধ্যম ছিল না, ছিল আশ্রয় ও সংগঠনের জায়গা। চর, খাল ও শাখা নদীর পাশে গড়ে উঠেছে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্থায়ী ঘাঁটি। স্থানীয় মানুষের সহায়তায় নদীকেন্দ্রিক এই প্রতিরোধ ব্যবস্থা ধীরে ধীরে শক্তিশালী হয়ে ওঠে এবং দখলদার বাহিনীর ওপর মানসিক ও কৌশলগত চাপ সৃষ্টি করে।
আজ বিজয়ের মাসে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন জাগে-আমরা কি মুক্তিযুদ্ধে নদ-নদীর এই ভূমিকার যথাযথ মূল্যায়ন করছি? নদী রক্ষা ও পুনরুজ্জীবনের বিষয়টি কি আমাদের জাতীয় চেতনার অংশ হয়ে উঠেছে? যে নদীপথ একদিন আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছিল, সেগুলো আজ দখল, দূষণ ও অবহেলায় অস্তিত্ব সংকটে।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে শুধু অতীত স্মরণ নয়, তা থেকে শিক্ষা নেওয়াও। নদ-নদী রক্ষা করা তাই শুধু পরিবেশগত দায়িত্ব নয়-এটি আমাদের ইতিহাস ও স্বাধীনতার প্রতি দায়বদ্ধতার অংশ। কারণ সত্যিই, বাংলাদেশের বিজয় এসেছিল নদীপথেই।
লেখক -এফ এইচ সবুজ
পরিবেশ ও নদী কর্মী



