প্রবাসে বিজয়ের গৌরব, বিশ্বমঞ্চে বাঙালির সাফল্য
কুয়ালালামপুরে গ্লোবাল এক্সেলেন্স আইকন অ্যাওয়ার্ডে সম্মানিত হলেন সাংবাদিক, ব্যবসায়ী ও সমাজকর্মীরা
মহান বিজয় দিবসের চেতনাকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুনভাবে উপস্থাপন করে প্রবাসে বাঙালির সাফল্য, সংস্কৃতি ও সক্ষমতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করল মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত গ্লোবাল এক্সেলেন্স আইকন অ্যাওয়ার্ড। বিজয়ের গৌরব, বাঙালির ঐতিহ্য ও বিশ্বমুখী অর্জনের সম্মিলনে এই আয়োজন পরিণত হয় প্রবাসে বাংলাদেশের এক অনন্য সম্মাননা উৎসবে।
সালাম মাহমুদ: বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবসের চেতনাকে প্রবাসে নতুন মাত্রায় তুলে ধরতে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত হয়েছে বর্ণাঢ্য বিজয় মেলা ও গ্লোবাল এক্সেলেন্স আইকন অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠান। গ্লোবাল স্টুডেন্ট অ্যালায়েন্স মালয়েশিয়া (জিএসএএম)-এর উদ্যোগে রাজধানী কুয়ালালামপুরের অভিজাত জি টাওয়ার হোটেলে এ আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে সাংবাদিকতা, ব্যবসা, শিল্প, শিক্ষা, মানবিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে প্রবাসে বিশেষ অবদানের জন্য একাধিক বাঙালিকে গ্লোবাল এক্সেলেন্স আইকন অ্যাওয়ার্ডে সম্মানিত করা হয়। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজ নিজ ক্ষেত্রে সাফল্যের মাধ্যমে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার স্বীকৃতি হিসেবে তাঁদের হাতে সম্মাননা স্মারক ও ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয়।
অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত বাঙালিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন দেশ গ্রুপের চেয়ারম্যান রোকেয়া কাদের, আসিয়ান সিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নজরুল ইসলাম ভূঁইয়া, মানবিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধে অনুপ্রেরণাদায়ী অবদানের জন্য নওমুসলিম মোহাম্মদ রাজ, মালয়েশিয়া প্রবাসী ব্যবসায়ী মোহাম্মদ রাজিব এবং সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমে বিশেষ অবদানের জন্য বাংলাদেশের সুনামধন্য সাংবাদিক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম খোকন। তাঁদের পাশাপাশি বিভিন্ন পেশা ও ক্ষেত্রে কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রাখা আরও বেশ কয়েকজন প্রবাসী বাঙালিও এই আন্তর্জাতিক সম্মাননায় ভূষিত হন।
অনুষ্ঠানটি শুধু বাংলাদেশের গৌরবময় স্বাধীনতার ইতিহাস উদযাপনেই সীমাবদ্ধ ছিল না; বরং এতে বাংলাদেশের সংস্কৃতি, শিল্পকলা, সংগীত ও ঐতিহ্য তুলে ধরার পাশাপাশি মালয়েশিয়ার বহুসাংস্কৃতিক সমাজের সঙ্গে আন্তঃসাংস্কৃতিক সেতুবন্ধন তৈরি হয়, যা প্রবাসে বাঙালি সংস্কৃতির অবস্থানকে আরও সুদৃঢ় করে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন ওয়াই এম দাতো পদুকা সেরি এম্বি ড. আর হাসনিজাল হাসান, উপ-সভাপতি, ইয়াসায়া তেংকু জারিল সুলাইমান এবং নেগেরি সেম্বিলান রাজপরিবারের একজন মর্যাদাপূর্ণ সদস্য। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ হাইকমিশনের ডেপুটি হাইকমিশনার মোসাম্মত শাহানারা মনিকা। এছাড়াও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মিশনের প্রতিনিধি মো. মর্কম মাম্বা ও কাথরিন মটঙ্গা অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও পেশাজীবী ব্যক্তিত্ব ড. মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম, ড. মনিরউদ্দিন চৌধুরী, ড. এইচ. এন. এম. একরামুল মাহমুদ, প্রফেসর ড. আসিফ মাহবুব করিমসহ প্রবাসী ব্যবসায়ী, সমাজকর্মী, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা। বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশের জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে আয়োজনকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলেন।
অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ছিল শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। এতে শিশুরা তাদের সৃজনশীলতা ও দেশপ্রেমের অনুভূতি ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলে। পাশাপাশি পরিবেশিত হয় বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী সংগীত, নৃত্য ও পোশাকের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা, যা অতিথিদের গভীরভাবে মুগ্ধ করে।
অতিথিদের সম্মানে আয়োজন করা হয় নৈশভোজ। পুরো অনুষ্ঠানজুড়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সক্রিয় উপস্থিতি আয়োজনটিকে আরও প্রাণবন্ত ও তথ্যবহুল করে তোলে। গ্লোবাল স্টুডেন্ট অ্যালায়েন্স মালয়েশিয়ার নেতৃত্বে ছিলেন চেয়ারম্যান দাতো’ রোশন দাস, উপদেষ্টা মাহবুব আলম শাহ, প্রেসিডেন্ট ড. এ. কে. এ. লিটন, কো-চেয়ারম্যান মো. আজিজুল হক, ফাউন্ডার মোছা. শামিমা আক্তার ও মো. রমজান, এবং জেনারেল সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট সুবর্ণা আক্তার।
অনুষ্ঠান বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন প্রোগ্রাম ডিরেক্টর ও শিক্ষার্থী বিষয়ক সমন্বয়কারী তাজরিয়ান বিনতে রহমান ও মো. হাসিবুর রহমান শোহাগ, সংস্কৃতি সমন্বয়কারী শৌরভ তারাফদার, স্বেচ্ছাসেবক নেতা মো. হাফিজুর রহমান, ইভেন্ট কো-অর্ডিনেটর জান্নাতুল ফেরদাউস কানা, মিডিয়া ম্যানেজার রেজুয়ানা বিনতে রেজা ও পারভেজ মো. তাইউব আলীসহ সংশ্লিষ্ট টিমের সদস্যরা।
ইভেন্ট অর্গানাইজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে শাওরি হোলিডে এসডিএন বিএইচডি ও ঢাকা টকস। স্পনসর ও সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ছিল বিএম প্লাটিনাম, সিফা সারমায়া কনস্ট্রাকশন এসডিএন বিএইচডি, জেড ওয়েল স্পেশালাইজড হাসপাতালসহ আরও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।
বিজয় মেলা ও গ্লোবাল এক্সেলেন্স আইকন অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানটি প্রবাসে বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবসের চেতনাকে নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাঙালির সাফল্য ও সক্ষমতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। স্বাধীনতা, সংস্কৃতি ও সৃজনশীলতার মেলবন্ধনে এই আয়োজন একটি স্মরণীয় ও অনুকরণীয় আন্তর্জাতিক সম্মাননা অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
বিআলো/তুরাগ



