ফর্সা ত্বকেই জন্মে বঞ্চনা, যশোরের আফিয়া ও তার মায়ের কষ্ট
বিআলো ডেস্ক: যশোরের তিন বছরের আফিয়া খাতুনের স্বাভাবিক শিশুশরীর বৈশিষ্ট্য ভিন্ন হওয়ায় বাবা তাকে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করেছেন। অ্যালবিনিজম রোগে আক্রান্ত আফিয়া এখন মা মনিরা খাতুনের সঙ্গে দিনযাপন করছেন অনাহারে-অর্ধাহারে। স্থানীয় প্রশাসন ও প্রতিবেশীরা সাধ্যমতো সহায়তা করার চেষ্টা করছেন।
যশোর সদর উপজেলার বাউলিয়া চাঁদপাড়া গ্রামের মোজাফ্ফর হোসেনের সঙ্গে ২০২০ সালে বিয়ে হয় কুয়াদা বাজুয়াডাঙ্গা গ্রামের মনিরা খাতুনের। ২০২২ সালের ১৩ নভেম্বর তাদের ঘর আলো করে আসে শিশু আফিয়া। কিন্তু জন্মের পরপরই শিশুর দুধসাদা ত্বক এবং হালকা ঘিয়ের চুলের কারণে মোজাফ্ফর তাকে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করেন। শেষ পর্যন্ত ৮ মাস পর তিনি স্ত্রীকে তালাক দিয়ে বিদেশে চলে যান।
মনিরা খাতুন বলেন, “বাচ্চা জন্মের পরই স্বামী নানা অপবাদ দিতে শুরু করে। বারবার বোঝানোর চেষ্টা করেছি, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। এখন আমাদের দুইজনের অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে। রাতের ঘুম নেই, খাবার যোগাড় করা দুঃসাধ্য।”
স্থানীয় সালিশ এবং স্বামী পক্ষের অঙ্গীকার অনুযায়ী প্রতি মাসে ১,৫০০ টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও দুই বছর পার হলেও কোনো অর্থ পাননি মনিরা। প্রতিবেশীরা আশ্বাস দেন যতটুকু সম্ভব সাহায্য করার, তবে সীমিত সম্পদে বড় কিছু করা যাচ্ছে না।
চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. গোলাম মোর্তুজা জানান, আফিয়ার ত্বকের রঙ জেনেটিক্যালি ত্রুটির কারণে এবং এটি চিকিৎসাযোগ্য নয়; শুধু রোদ থেকে চোখ ও ত্বক রক্ষা করতে হবে।
স্থানীয় প্রশাসনও ঘটনা সম্পর্কে অবগত। রামনগর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান রামপ্রসাদ রায় বলেন, “দুঃখজনক বিষয়, আমরা পরিবারটিকে সহায়তা করব এবং গ্রাম আদালতে অভিযোগ করলে ভরণপোষণ নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” জেলা প্রশাসক মো. আজহারুল ইসলাম জানান, “যদি কেউ গৃহহীন বা আর্থিক সহায়তার প্রয়োজন হয়, তা আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। থাকার ব্যবস্থা এবং সহায়তা দেওয়া হবে।”
এদিকে, অভিযুক্ত মোজাফ্ফরের খোঁজ পাওয়া যায়নি, পরিবারও কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
অফিসাররা বলছেন, এই ধরনের জেনেটিক রোগ দেশে বহু শিশুতে দেখা যায় এবং সামাজিকভাবে অস্বীকার করা অত্যন্ত অমানবিক।
বিআলো/শিলি



