ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিতেই চেষ্টা করছে সরকার: প্রধানমন্ত্রী

ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিতেই চেষ্টা করছে সরকার: প্রধানমন্ত্রী
ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ব্যবসা করতে নয়, বরং ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিতেই বর্তমান সরকার চেষ্টা করে যাচ্ছে।


বুধবার (১জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ২৫তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।


সারাবিশ্বের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সারাদেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করেছি। বাংলাদেশে যারা বিনিয়োগ করবে, তাদের বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে।


তিনি বলেন, একটি দেশকে উন্নতির শিখরে পৌঁছতে হলে ব্যবসা-বাণিজ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কথায় আছে ‘বাণিজ্যে বসতি লক্ষ্মী’ আমরা নিজেরা ব্যবসা করি না, কিন্তু ব্যবসায়ীদের ব্যবসা করার জন্য যে সুযোগ-সুবিধা দরকার তা আমরা করে দিচ্ছি। বাংলাদেশের রফতানি শুধু একটা দুটো পণ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। আরও বাড়াতে হবে। এ জন্য যে সুযোগ-সুবিধা দরকার, তা আমরা করে দেব।


শেখ হাসিনা বলেন, সারা বিশ্বে প্রবৃদ্ধির হার যখন কমছে তখন বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার বাড়ছে। বর্তমানে আমাদের প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ১৫ ভাগ। আমাদের দেশের মানুষের আগে ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে হবে। এরপর আমরা বিদেশে রফতানি করব। ব্যবসা-বাণিজ্য করার জন্য বা বিনিয়োগের জন্য ভূমি বা জমি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটা বিষয়ে আমরা ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করেছি। যেখানে সারা বিশ্বের যে কেউ সহজে এসে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারেন।


তিনি বলেন, আমরা তাদের (যারা ইতোমধ্যে এসেছেন) বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাবে। ব্যবসা-বাণিজ্য আরও কীভাবে সহজ করা যায়, আমরা সে ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করছি। আমাদের রিজার্ভ যথেষ্ট ভালো। প্রত্যেকটা দূতাবাসে আমাদের নির্দেশনা দেয়া আছে, সংশ্লিষ্ট দেশে বাংলাদেশের একটা মার্কেটিং কীভাবে গড়ে তোলা যায়। সেভাবে তাদের নির্দেশনা দেয়া আছে। এখন ডিপ্লোমেসিটা শুধু কূটনীতিকের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। এখন ডিপ্লোমেসি করতে হবে ইকোনমিক দিপ্লোমেসি।


শেখ হাসিনা বলেন, আমরা আইসিটিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। যত বেশি ডিজিটাল ডিভাইস করা যাবে ততো আমরা লাভবান হব। আইসিটি একসময় এ দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর হয়ে দাঁড়াবে।


বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছেন, ৩২ একর জমির ওপর নতুন রূপে সাজানো হয়েছে এবারের বাণিজ্য মেলা। মেলার প্রধান গেট সাজানো হয়েছে জাতীয় স্মৃতিসৌধের আদলে, সঙ্গে থাকবে পদ্মা সেতুর মডেল। মেলায় আগত দেশি-বিদেশি অংশগ্রহণকারী এবং দর্শনার্থীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। খোলামেলা পরিসরে গতবছরের তুলনায় এবার স্টলের সংখ্যা কমানো হয়েছে। গত বছর মোট ৬৩০টি ছোট-বড় স্টল কমিয়ে এবার করা হয়েছে ৪৮৩টি। এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ক্যাটাগরির প্যাভেলিয়ন ১১২টি, মিনি প্যাভেলিয়ন ১২৮টি এবং বিভিন্ন ক্যাটাগরির স্টল ২৪৩টি।


বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ২০২১ সালে বাংলাদেশের রফতানি ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার নির্ধারণ করে সরকার এগিয়ে যাচ্ছে। ২০২৪ সালে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হবে। ২০২৭ সালের পর বাংলাদেশ আর এলডিসি দেশের সুবিধা ভোগ করতে পারবে না। সেজন্য বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এফটিএ এবং পিটিএ করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।


এবারের মেলায় বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২১টি দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৪৮৩টি প্যাভিলিয়ন ও স্টল থাকবে। দেশি-বিদেশি দর্শনার্থীদের জন্য মেলা প্রাঙ্গণ প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। এবারের মেলায় প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন রাখা হয়েছে ৬৪টি। সাধারণ প্যাভিলিয়ন ১৩টি, সাধারণ মিনি প্যাভিলিয়ন ৫৯টি এবং প্রিমিয়াম মিনি প্যাভিলিয়ন ৪২টি।


সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী জানান, মেলায় প্রবেশের জন্য প্রাপ্ত বয়স্কদের টিকিটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০ টাকা, অপ্রাপ্ত বয়স্কদের টিকিটের মূল্য রাখা হয়েছে ২০ টাকা। গতবছর পূর্ণবয়স্কদের জন্য মেলায় প্রবেশে টিকেটের মূল্য ছিল ৩০ টাকা আর অপ্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য নির্ধারিত টিকিটের হার ছিল ২০ টাকা।


সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, মেলা প্রাঙ্গণে রেস্তোরাঁ থাকবে দুটি, স্ন্যাকস বুথ ৭টি, প্রিমিয়ার স্টল ৮৪টি, সংরক্ষিত প্যাভিলিয়ন ৬টি, সংরক্ষিত মিনি প্যাভিলিয়ন ৮টি, সাধারণ স্টল ১০৭টি এবং ফুড স্টল রাখা হয়েছে ৩৫টি। পাশাপাশি বিদেশি প্যাভিলিয়ন ২৭টি, বিদেশি মিনি প্যাভিলিয়ন ১১টি এবং বিদেশি প্রিমিয়াম স্টল ১৭টি।