বোয়ালখালীতে বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী কালোজিরা ধানের আবাদ
কে.ডি পিন্টু চট্টগ্রাম দক্ষিণ: চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায় দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে কৃষকের ঐতিহ্যবাহী কালোজিরা ধানের আবাদ। এক সময় অন্যান্য দেশি ধানের পাশাপাশি এই সুগন্ধিযুক্ত কালোজিরা ধানের চাষ ছিল গ্রামবাংলার পরিচিত চিত্র। তবে উৎপাদন খরচ বেশি ও ফলন তুলনামূলক কম হওয়ায় বর্তমানে এ ধান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষকেরা। এর ফলে কালোজিরা ধানের জমি দখল করে নিয়েছে আধুনিক উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উচ্চ ফলনশীল ধানের প্রতি আগ্রহ বাড়ার পাশাপাশি বীজের সংকটও কালোজিরা ধান চাষ কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। তবে সরকারিভাবে প্রয়োজনীয় সহায়তা, প্রণোদনা ও প্রদর্শনী দেওয়া হলে এই ঐতিহ্যবাহী ধান আবারও বিলুপ্তির পথ থেকে ফিরে আসতে পারে বলে মনে করছেন তারা।
বুধবার বিকেলে বোয়ালখালীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আমন মৌসুমে সর্বত্রই উচ্চ ফলনশীল বিভিন্ন জাতের ধানের চাষ হয়েছে। কালোজিরা ধানের আবাদ এখন প্রায় নেই বললেই চলে। হাতে গোনা কয়েকজন কৃষক সীমিত পরিসরে এই ধান চাষ করছেন। তাদের মধ্যে সারোয়াতলীর কৃষক নুরুল আলম, করলডেঙ্গার কৃষক কাওসার এবং পোপাদিয়ার কৃষক আনোয়ার উল্লেখযোগ্য।
কৃষকেরা জানান, একসময় প্রতিটি কৃষক পরিবারের ঐতিহ্যের অংশ ছিল সুগন্ধিযুক্ত কালোজিরা, বিন্নী, কাশিয়াবিন্নি ও অন্যান্য সরু জাতের ধান। ধান কাটার সময় গ্রামবাংলায় নবান্ন উৎসব ঘিরে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হতো। এই চিকন ও সুগন্ধি চাল দিয়ে পিঠা-পুলি, পোলাও, বিরিয়ানি, খিচুড়ি, ক্ষির, পায়েস, ফিরনি ও জর্দাসহ নানা ধরনের মুখরোচক খাবার তৈরি করে পাড়া-প্রতিবেশীদের আপ্যায়ন করা হতো।
আবহমান বাংলার রীতি অনুযায়ী শ্বশুরবাড়িতে জামাই এলে জামাই পাতে সুগন্ধিযুক্ত চিকন চালের ভাত পরিবেশন ছিল নিয়মিত আয়োজন। বিত্তবান পরিবার থেকে শুরু করে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারেও অন্তত একবেলা এই চালের ভাত রান্না করা হতো। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এসব ঐতিহ্য এখন স্মৃতির পাতায় ঠাঁই নিয়েছে।
ক্রমবর্ধমান খাদ্যচাহিদা মেটাতে গিয়ে সারাদেশের মতো বোয়ালখালীতেও হারিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতিবান্ধব দেশি ধানের জাতগুলো। কৃষকেরা জানান, কালোজিরা ধানের ফলন তুলনামূলক কম। যেখানে অন্য জাতের ধানে কানিপ্রতি ৮০ থেকে সর্বোচ্চ ১০০ আড়ি উৎপাদন হয়, সেখানে কালোজিরা ধানের ফলন সর্বোচ্চ ৩০ আড়ি পর্যন্ত। তবে বাজারে এই চালের দাম তুলনামূলক বেশি, প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হয়।
লাভের দিক বিবেচনায় কৃষকেরা উচ্চ ফলনশীল আমন ধানের জাতের প্রতি ঝুঁকলেও গ্রামাঞ্চলের গৃহস্থ পরিবারে এখনো এই চালের কদর রয়েছে। অথচ হাট-বাজারে এই চাল এখন প্রায় অনুপস্থিত। ফলে ঐতিহ্যবাহী এই সুগন্ধি ধান আজ বিলুপ্তির পথে।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, পাঁচ বছর আগে বোয়ালখালীতে ২৫ হেক্টর জমিতে কালোজিরা ধানের আবাদ ছিল। বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৫ হেক্টরে।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার মো. শাহানুর ইসলাম জানান, বর্তমানে আমন মৌসুমে এমন অনেক উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত রয়েছে যেগুলোর উৎপাদন বেশি এবং রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ তুলনামূলক কম। অন্য জাতের তুলনায় কালোজিরা ধানের ফলন কম হলেও বাজারমূল্য বেশি থাকে। তবে উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় কৃষকেরা ধীরে ধীরে এই ধান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন।
বিআলো/ইমরান



