মাছ ধরতে জেলেদের প্রস্তুতি : মধ্যরাতেই শেষ ২২ দিন নিষেধাজ্ঞা 

মাছ ধরতে জেলেদের প্রস্তুতি : মধ্যরাতেই শেষ ২২ দিন নিষেধাজ্ঞা 

হেলাল উদ্দিন, টেকনাফ প্রতিনিধি: দেশের  সাগর ও নদীগুলোতে ইলিশ শিকারের প্রস্তুতি শেষের দিকে জেলেদের। ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসম ১৪ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত হওয়ায়, ৪নভেম্বর বুধবার রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে পুনরায় ইলিশ শিকার শুরু হবে। তাই  সাগর ও নদীতে যাওয়ার জন্য টেকনাফ উপজেলার প্রায় ৭৮৮৩ জন জেলে শেষ সময়ে জাল বুনন, ট্রলার মেরামত  নৌকা  মেরামত ও পুরাতন জাল রিপু করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

দীর্ঘ ২২ দিনের অলস সময় শেষে নিষেধাজ্ঞার শেষ মুহুর্তে আনন্দিত জেলে পল্লী। যদিও ইলিশের মৌসুম শেষ হয়েছে। তারপরেও গত কয়েকবছর শীতের সময় প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ায় এবার যেন আগ্রহ অনেক বেড়ে গেছে জেলেদের।

টেকনাফ উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ৬টি ইউনিয়নে মা ইলিশ শিকার নিষেধাজ্ঞার ২২ দিনের জন্য ৭৮৮৩ জন জেলে পরিবারের মধ্যে ইলিশ শিকারী ৩৪০০ জন জেলে পরিবারের মাঝে ২০ কেজি করে চাল বিতরণ করেছে সরকার। তৎ মধ্য টেকনাফ পৌরসভার ২০০ জনকে ৪ মেট্রিকটন, সদর ইউনিয়নের ৪৯০ জনকে ৯ মেট্রিকটন ৮০০ কেজি, হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ৫০০ জনকে ১০ মেট্রিকটন, হ্নীলা ইউনিয়নে ২৮৮ জনকে ৫ মেট্রিকটন ৭৬০ কেজি, সাবরাং ইউনিয়নে ৭৫০জনকে ১৫ মেট্রিকটন, বাহার ছড়া ইউনিয়নে ৮৫০ জনকে ১৭ মেট্রিকটন, সেন্টমার্টিন ইউনিয়নে ৩২২ জনকে ৬ মেট্রিকটন ৪৪০ কেজি করে সর্বমোট ৬৮ মেট্রিকটন চাল বিতরণ করা হয়েছে ৩৪০০ জন জেলে পরিবারে। যার ফলে অধিকাংশ জেলেই আইন মান্য করে মাছ ধরা থেকে বিরত রেখেছে নিজেদের। তারপরেও যারা আইন ভঙ্গ করছে স্থানীয় প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে।

টেকনাফ কায়ুকখালী ঘাট, সদর ইউনিয়নের তুলাতলী ঘাট,  লেঙ্গুঁরবিল ঘাট, সাবরাংয়ের মুন্ডার ডেইল ঘাট,  বাহারছড়া ঘাটসহ বেশকিছু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, জেলেদের ব্যস্ততা চোখে পড়ার মতো। নদীর কুল ঘেষে বাঁধের উপর রাখা হয়েছে সারি সারি নৌকা ও ইঞ্জিন চালিত ট্রলার। কেউ পুরনো জালকে নতুন করে রিপু করছে। কেউ বা নতুন জাল বুনতে ব্যস্ত। আবার কেউ নৌকা-ট্রলার মেরামত করছে। কেউবা নৌ-যানের নিচের অংশে পুডিং ও আলকাতরা লাগাচ্ছেন। সব মিলিয়ে একটা কাজের সময় বিরাজ করছে পল্লীগুলোতে। শিশু থেকে শুরু করে কেউ বসে নেই। সম্মিলিতভাবে পরিবারের সবাই কাজে হাত লাগাচ্ছে। এ পরিবারগুলো স্বপ্ন দেখছে ইলিশের প্রাচুর্যতায় তাদের অভাব দূর হবে।

জেলে মালেক ও আলী জানায়, এখন সাগর ও নদীতে মাছ ধরা বন্ধ, নৌকা-ট্রলার নিয়ে সাগর ও নদীতে যাওয়া হচ্ছেনা। ধার দেনা করে দিন পার করছি। সামনে আসছে মাছ ধরার সময়, তাই নৌকা মেরামত করছি। আগে থেকে নৌকা তৈরী করতে না পারলে তখন সময় পাবো না। মাছ শিকারে যাওয়ার জন্য নৌকা মেরামত ও রং দেয়ার কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছিলেন জেলে গফুর ও করিম। তারা জানান, এ বছর ভরা মৌসুমে তেমন মাছ ধরা পড়েনি। আশা করি নিষেধাজ্ঞার পর ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়বে। তখন মাছ ধরেই ঋণ পরিশোধ করতে পারবো। ঘুরে দাঁড়াতে পারবো। মাছ ধরা শুরু হলে সব জেলে নদীতে নেমে পড়বেন বলে জানান তারা।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতির টেকনাফ উপজেলার সভাপতি আব্দুস ছালাম জানান, সরকারের মা ইলিশ রক্ষা কার্যক্রমের ফলে সাগর ও নদীতে ইলিশের উৎপাদন অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই এবছর অধিকাংশ জেলেই আইন মান্য করেছে। বর্তমানে জেলেদের নৌকা-ট্রলার-জালসহ অনান্য সরাঞ্জম ইলিশ শিকারের জন্য প্রস্তুতির শেষ পর্যায়ে। আশা করছেন সামনের দিনলোতে ব্যাপক ইলিশ পাবেন। এই ২২ দিন বন্ধের মধ্যে জেলেদের নিয়ে আন্তঃ উপজেলা ভিত্তিক একটা ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করেছি। টুর্নামেন্ট এখন পর্যন্ত চলমান রয়েছে, টুর্নামেন্ট টা ৬ নভেম্বর টেকনাফ হাই স্কুল মাঠে ফাইনাল খেলার মধ্যদিয়ে শেষ হবে।

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ দেলোয়ার হোসেন বলেন,  ৪ নভেম্বর বুধবার রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাচ্ছে। আশা করা হচ্ছে এবছর নির্বেঘ্নে মা ইলিশ তাদের ডিম ছাড়তে সক্ষম হয়েছে। সরকারের ব্যাপক প্রচার প্রচারণার ফলে অধিকাংশ জেলেই ইলিশ শিকার থেকে বিরত ছিলো। তারপরেও অসাধু যারা আইন ভঙ্গ করছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

বিআলো/শিলি