মূত্রথলির ক্যান্সার নিয়ে সতর্কতা 

মূত্রথলির ক্যান্সার নিয়ে সতর্কতা 

ডা. মো. সিদ্দিকুর রহমান: ২০১১ সাল থেকে আজ অবদি বাংলাদেশের একমাত্র ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, মহাখালি, ঢাকাতে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের স্বাস্থ্য সেবার সঙ্গে আছি। ইউরোঅনকোলজি তথা কিডনি, মূত্রনালী. মূত্রথলি, প্রস্টেট, প্রস্রাবের রাস্তা, লিঙ্গ, অণ্ডকোষ ইত্যাদি স্থানের ক্যান্সার রোগীদের সেবা প্রদান করছি। দেশের সব জায়গা থেকে এই হাসপাতালে শরীরের ভিন্ন স্থানের ক্যান্সার নিয়ে সেবা নিতে আসছেন; তার মধ্েয মূত্রথলির ক্যান্সার রোগীর সংখ্যাও অন্যতম।  

★ রোগের উৎপত্তি বা লক্ষণ:
মূত্রথলির ক্যান্সার রোগীরা যেসক  লক্ষণ নিয়ে আসেন তার মধ্যে প্রধান হলো-প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়া যা সাধারণত ব্যথাবিহীন, চাকা চাকা দুর্গন্ধযুক্ত জমাট রক্ত যাতে প্রস্রাব আটকে যেতে পারে তবে প্রস্রাব জ্বালাপোড়া, ঘন ঘন প্রস্রাব, তলপেটে ব্যথা, কোমরে ব্যথা ইত্যাদি লক্ষণও হতে পারে। কাজেই যে কোনো বয়সের নারী বা পুরুষের প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত গেলে গুরুত্ব সহকারে দূততার সঙ্গে ইউরোলজি ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। বিশেষ করে পুরুষের ক্ষেত্রে বেশি  গুরুত্বপূর্ণ।মূত্রথলির ক্যান্সার যদি জটিল আকার ধারণ  করে তবে কাশি, পেটের ব্যথা, হাড়ে ব্যথা, জন্ডিস ইত্যাদি উপসর্গও দেখা দিতে পারে। বেশির ভাগ মূত্রথলির ক্যান্সার রোগী পুরুষ এবং ৫০ থেকে ৬০ বছর বয়সের।

★সতর্ক সংকেত :
মূত্রথলির ক্যান্সার হওয়ার কারণ সব সময় জানা না গেলেও কিছু কিছু কারণ স্পষ্ট যেমন ধূমপান করলে বা তামাকজাতীয় দ্রব্য সেবন, পেশাদার রঙ মিস্ত্রির কাজ, মূত্রথলির স্থায়ী প্রদাহ বা পাথর থাকলে মূত্রথলির টিউমার হতে পারে। আবার কোনো কোনো সময় অন্য ক্যান্সারের ওষুধ সেবন করলে বা রেডিওথেরাপি নিলে এমনকি বংশগত কারণেও হতে পারে।

★চিকিৎসা :
মূত্রথলির ক্যান্সারের চিকিৎসা সবসময় ফলপ্রসূ  অতটা নাও হতে পারে তবে প্রাথমিক অবস্থায় নির্ণয় করতে পারলে ইউরোঅনকোলজি চিকিৎসায়  ১০০℅ রোগমুক্তি সম্ভব। কিন্তু নিয়মিত চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ  করতে হবে। কাজেই প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত গেলে বা অন্য সমস্যা থাকলে দ্রুত ইউরোলজি ডাক্তারের কাছে গিয়ে রোগ নির্ণয়ের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। প্রস্রাব পরীক্ষা, আলট্রাসনোগ্রাম, সিটি স্ক্যান, এমআরইউরোগ্রাফি, যন্ত্রের সাহায্যে প্রস্রাবের থলি পরীক্ষা ও প্রয়োজনে টিউমার কেটে পরীক্ষা করে ক্যান্সার নির্ণয় করা যায়। এন্ডোস্কোপিক পদ্ধতিতে মূত্রথলির ক্যান্সার সঠিকভাবে নির্ণয় ও চিকিৎসা একসঙ্গে করা যায়। 

★সূচনায় পড়লে ধরা :

মূত্রথলির টিউমার যদি প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়ে যায়,ভাল ধরনের হয় এরং থলিতেই সীমাবদ্ধ থাকে তবে যন্ত্রের সাহায্যে পূর্ণাঙ্গভাবে টিউমার কাটা যায়। কিন্তু যদি বিলম্ব হয়, ক্যান্সার জটিল আকার ধারণ করে বা থলি থেকে অন্যত্র ছড়িয়ে যায় তখন কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপির সাহায্যে চিকিৎসা করা যায়। সব ধরনের চিকিৎসাতেই সাফল্য আছে।

কাজেই মূত্রথলির টিউমার বা ক্যান্সারের লক্ষণ দেখা দিলে অথবা রোগ ধরা পড়লে হতাশ না হয়ে দূত ইউরোঅনকোলজি চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসা নিলে কোনো জটিলতা ছাড়াই আরোগ্যলাভ সম্ভব।

লেখক:ডা. মো. সিদ্দিকুর রহমান 
(কিডনি মূত্রথলি,প্রস্রাবের রাস্তা ও যৌনাঙ্গ রোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন) 
এমবিবিএস (ঢাকা ) এমএস (ইউরোলজি)
সহকারী অধ্যাপক ইউরোঅনকোলজি বিভাগ 
জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, মহাখালি, চেম্বার: এ্যাডেন্ট আমির কমপ্লেক্স, বসুন্ধরা রোড, জগন্নাথপুর, ভাটারা, ঢাকা।
 ০১৭১৬-৫১৫-৮৭৫
০১৭০৬-৩৯১-১৪১