মাদারীপুরে এক ইউনিয়নের ৩ গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন

মাদারীপুরে এক ইউনিয়নের ৩ গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন

সুইটি আক্তার, মাদারীপুর: মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের মাগুরখন্ড মৌজার আইনউদ্দিন হাওলাদার কান্দি, মুন্সী আব্দুল আজিজ ফকির কান্দি ও হাজী মনসুর খাঁর কান্দি পদ্মার ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। 

এই তিনটি গ্রাম কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত। মাগুরখ বহু বছর আগে পদ্মার বুকে জেগে ওঠে এবং গড়ে ওঠে জনবসতি। দীর্ঘদিন পর এলাকাটির আংশিক আবার পদ্মার বুকে বিলীন হয়ে যায়। এ বছর মানচিত্র থেকে প্রায় পুরোপুরিভাবে হারিয়ে গেছে  এ মৌজার গেছে তিনটি গ্রাম। পদ্মার তীব্র স্রোত এখন বয়ে যাচ্ছে হারিয়ে যাওয়া মাগুরখন্ডের বুকের ওপর দিয়ে। সাক্ষী হিসেবে কয়েকটি গাছ ও সামান্য একটু ভূমি থাকলেও নেই কোনো বসতি। পদ্মার তীব্র স্রোতে এখন সেখানে যাওয়া অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এ বছর ভিটেমাটি হারিয়ে কয়েকশ’ পরিবার এসে আশ্রয় নিয়েছে কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের মূল ভূ-খন্ডে। পৈত্রিক ভিটেমাটি হারানো এ সব পরিবারের সামনে হতাশা আর অনিশ্চয়তার ছাড়া আর কিছু নেই। 

সংশ্লিষ্ট জানা গেছে, শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের মাগুরখন্ড মৌজা। মূলত এ মৌজার তিনটি গ্রাম পদ্মা নদীবেষ্টিত একটি চর ১৯৩২ সালের দিকে জেগে ওঠে। এবং  ১৯৩৮ সালের দিকে গ্রামের প্রথম গোড়া পত্তন শুরু হয়। দীর্ঘদিন পরে ১৯৮৮ থেকে ১৯৯১ সালের মধ্যে পুরো মাগুরখন্ড আবার পদ্মার গর্ভে চলে যায়। এরপর প্রায় ৪/৫ বছর পানির নিচে থাকার পর চর জেগে ওঠে পদ্মার বুকে। ১৯৯৮ সালের দিকে বসবাসের উপযোগী হয়ে ওঠে। তখন স্থানীয় আলতাফ আকন, সালাম ফকির, দাদন বেপারীসহ কয়েকটি পরিবার প্রথম বাড়ি-ঘর নির্মাণ করে সেখানে। ৭৫৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই গ্রামে শতশত পরিবার ঘর-বাড়ি তৈরি করে  বসবাস শুরু করে মাগুরখন্ড এলাকায়। বারবার ভাঙণ কবলিতরা স্বাভাবিক জীবন ফিরে আসে। গড়ে উঠে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার, স্বাস্থ্য কেন্দ্র সড়ক। প্রায় ২০ বছর পর ফের ভাঙন শুরু হয় পদ্মার চরের এই গ্রামটিতে। চলতি বছর বর্ষা মৌসুমে ভাঙন শুরু হলে পুরো এলাকা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এর আগে ২০১৫ থেকে ২০১৭ সালের দিকে মাগুরখন্ড মৌজার অন্য দুটি গ্রাম নদীতে বিলীন হয়ে যায়। মাগুরখন্ড এলাকায় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মাদ্রাসা, একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র, হাট-বাজার, সড়কসহ প্রায় সাড়ে ৭শ’ পরিবারের বসবাস ছিল। চলতি বছর বর্ষার প্রথম দফা ভাঙন শুরু হয়ে দ্বিতীয় দফার ভাঙনে পুরো গ্রামটিই বিলীন হয়ে যায়। বর্তমানে ভিটেমাটি হারিয়ে ওই পরিবারগুলো কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের মূল ভূ-খন্ডে, 

কাওড়াকান্দিঘাট সংলগ্ন এলাকা ও মুন্সিগঞ্জের বিক্রমপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে। তবে এদের সবাই অন্যের জমিতে সাময়িক সময়ের জন্য ভাড়া নিয়ে বসবাস করছেন। ভাঙনের শিকার মোমিন আকন বলেন, এ বছর পুরো গ্রাম বিলীন হয়ে গেছে। কোনো চিহ্নই নেই। আমরা ৫ বছরের জন্য অন্যের জমি ভাড়া নিয়ে আশ্রয় নিয়েছি। হোসেন মাদবর বলেন, আমাদের স্থায়ী গন্তব্য কোথায় হবে জানা নেই। আবার চর জাগলে হয়তো গ্রামে ফিরে যেতে পারবো। কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড সদস্য মো. মাহাবুব ফকির বলেন, মাগুরখন্ড এলাকাটি ১নং ওয়ার্ডের। যার পুরোটাই এখন পদ্মার গর্ভে। আমার ভিটেমাটিও নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে এবার। কোথায় যাবে এই এলাকার বাসিন্দারা তার কোনো ঠিক ঠিকানা নাই। তবে আমাদের দাবি সরকারিভাবে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দিলে অন্তত মাথা গোঁজার ঠাঁই পাবে এ এলাকার মানুষ।