মাওলানা ভাসানীর ৪৯ তম মৃত্যুবার্ষিকীতে একাত্তর পার্টির গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি
নিজস্ব প্রতিবেদক: মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী—বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের একজন, নিপীড়িত মানুষের অধিকার রক্ষায় দৃপ্ত উচ্চারণ, গণমানুষের নেতা। পাকিস্তান আমলে পূর্ব বাংলার বৈষম্য-শোষণ তিনি পঞ্চাশের দশকেই অনুধাবন করেছিলেন। ১৯৫৭ সালের কাগমারী সম্মেলনে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকদের উদ্দেশে উচ্চারিত তাঁর ঐতিহাসিক “আসসালামু আলাইকুম” উচ্চারণ তাকে এনে দেয় জনতার নেতা হিসেবে স্বতন্ত্র পরিচয়।
১৮৮০ সালের ১২ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জের ধানগড়া গ্রামে জন্ম নেওয়া এই মহান নেতা শৈশবে এক মহামারীতে বাবা-মা ও পরিবারের সবাইকে হারান; বেঁচে যান একাই। তিনি ছিলেন মূলত স্বশিক্ষিত, কিন্তু রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও গণমানুষের ভাষা বোঝার ক্ষেত্রে ছিলেন অনন্য।
কৈশোর থেকেই তিনি রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। দীর্ঘদিন বাংলা-আসামের মুসলিম লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৪ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট গঠনের অন্যতম প্রধান স্থপতি ছিলেন। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে পাকিস্তান আমলের গণআন্দোলন—সবক্ষেত্রেই তিনি ছিলেন অগ্রণী ভূমিকায়। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালে গঠিত প্রবাসী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সভাপতিও ছিলেন তিনি।
কৃষক, শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ে তার সংগ্রাম ছিল নিরবচ্ছিন্ন। জমিদার, শোষক ও স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে তার হুংকারে কেঁপে উঠেছে সিংহাসন। জাতির ভয়াবহ দুর্দিনে তিনি বারবার জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তার অনুসারীরা তাকে ‘লাল মাওলানা’ নামে ডাকতো, কারণ তিনি সবসময় নিপীড়িত মানুষের পক্ষে আপোষহীন অবস্থান নিতেন।
শোষণমুক্ত, প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাই ছিল তার আজীবন লড়াইয়ের মূল আদর্শ। ব্যক্তিজীবনে তিনি ছিলেন অত্যন্ত সাদাসিধে, নির্মোহ ও অনাড়ম্বর—যা তার দেশ ও জনগণের প্রতি গভীর ভালোবাসার প্রতিফলন।
১৯৭৬ সালের ১৭ নভেম্বর ঢাকার পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। আজ তাঁর ৪৯ তম মৃত্যুবার্ষিকীর দিনে তাকে স্মরণ করছে জাতি।
এ উপলক্ষে বাংলাদেশ একাত্তর পার্টি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছে। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মো. নাজিম হোসেন বলেন—“মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকীতে আমি তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই এবং তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। তিনি বাঙালি জাতিসত্তা ও জাতীয় ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় নাম। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে উপমহাদেশের নিপীড়িত মানুষের পক্ষে অবিচল নেতৃত্ব দিয়ে তিনি প্রমাণ করেছেন—একজন সত্যিকারের জননেতা কেমন হন।”
তিনি আরও বলেন—“স্বাধীনতা সংগ্রাম, গণতান্ত্রিক আন্দোলন, কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ভাসানী ছিলেন এক উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা। তাঁর অবস্থান ছিল সবসময় শোষণের বিরুদ্ধে, শোষিতের পক্ষে। জাতির সংকটে তিনি যেভাবে জনগণকে সাহস জুগিয়েছেন, তা ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।”
নাজিম হোসেন বলেন—“গণতন্ত্র, মানবাধিকার, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার সংগ্রামে ভাসানী আমাদের প্রেরণার উৎস। তাঁর দেশপ্রেম ও নির্ভিক নেতৃত্ব আমাদের অনুপ্রাণিত করবে যুগ যুগ ধরে। তাঁর আদর্শ অনুসরণ করতে পারলেই আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হবো।”
বিআলো/তুরাগ



