যুবলীগ নেতা সম্রাট ও এমপি শাওনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তলব

যুবলীগ নেতা সম্রাট ও এমপি শাওনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তলব

নিজস্ব প্রতিবেদক: যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আলোচিত ইসমাইল হোসেন সম্রাট ও আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের ব্যাংক হিসাব তলব করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীর কাছে এক চিঠি পাঠিয়ে এসব তথ্য চাওয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, ভোলার লালমোহন-তজুমদ্দিনের সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী ও ইসমাইল হোসেন সম্রাটের ব্যাংক হিসাবে কী পরিমাণ টাকা লেনদেন হয়েছে, তার হিসাব পাঁচ দিনের মধ্যে দিতে বলা হয়েছে তফশিলি ব্যাংকগুলোকে।

একই সঙ্গে তাঁদের স্ত্রী, মা বা স্বজনদের নামে কোনো হিসাব থাকলে তা-ও স্থগিত করা হয়েছে। অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইনের আওতায় এসব হিসাব ৩০ দিনের জন্য স্থগিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এদিকে গ্রেফতার হওয়া যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ও গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জিকে শামীমসহ সব ক্যাসিনো কারবারিদের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

বিএফআইইউ-এর প্রধান আবু হেনা মোহাম্মদ রাজি হাসান বলেন, সন্ত্রাসী ও মানি লন্ডারিং বিষয়ে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে বিএফআইইউ তা অনুসন্ধান করে। সম্প্রতি এসব অপরাধে যারা গ্রেফতার হয়েছেন তাদের হিসাবও যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। অনুসন্ধানকালে তাদের হিসাবে টাকা জমা হবে কিন্তু উত্তোলন করা যাবে না।

ঢাকায় অবৈধভাবে ক্যাসিনো ও জুয়ার বোর্ড পরিচালনা এবং চাঁদাবাজির অভিযোগে সম্রাটকে গ্রেফতার করা হবে বলে গুঞ্জন রয়েছে। গত বুধবার ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে অবৈধ অস্ত্র ও ইয়াবা রাখার অপরাধে গ্রেফতার, সন্ধ্যায় বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ (ক্রীড়া চক্র) ক্লাবসহ বিভিন্ন ক্যাসিনো ও জুয়ার বোর্ডে র‌্যাবের অভিযানের পর সম্রাটকে গ্রেফতারের গুঞ্জন ওঠে। এরপর থেকেই অনেকটা আত্মগোপনে রয়েছেন যুবলীগের এ প্রভাবশালী নেতা।

সূত্র জানায়, ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ও সম্রাটের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। মতিঝিল-ফকিরাপুল ক্লাবপাড়ায় ক্যাসিনো থেকে শুরু করে কমপক্ষে সাতটি সরকারি ভবনে ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ ও সরকারি জমি দখলের মতো নানা অভিযোগ এ নেতার বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলাও। রিয়াজ, মিল্কি ও তারেক হত্যার পর পুরো এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেন খালিদ মাহমুদ ভূঁইয়া। এসবই তিনি করেছেন ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের ছত্রচ্ছায়ায়।

সম্রাটের সহযোগিতায় ও প্রত্যক্ষ মদদে ঢাকার এক অংশ নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন খালেদ। নিজের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে সর্বোচ্চ শক্তি ব্যবহার করেন তিনি। রাজধানীর মতিঝিল, ফকিরাপুল এলাকায় কমপক্ষে ১৭টি ক্লাব নিয়ন্ত্রণ করেন এ যুবলীগ নেতা। এর মধ্যে ১৬টি ক্লাব নিজের লোকজন দিয়ে আর ফকিরাপুল ইয়াংমেন্স নামের ক্লাবটি সরাসরি পরিচালনা করেন তিনি। প্রতি ক্লাব থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে এক লাখ টাকা নেন তিনি। এসব ক্লাবে সকাল ১০টা থেকে ভোর পর্যন্ত ক্যাসিনো বসে।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের বিরুদ্ধে আনা নানা অভিযোগের একটি প্রতিবেদন এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ঢাকা মহানগরীর চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে না ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ও তার কিছু লোকজনের দৌরাত্ম্যে। এ বিষয়ে যাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হয় তার অনুরোধ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।