যেমন আছেন লালমনিরহাটের ধারা পল্লীর ৩৫ পরিবার

যেমন আছেন লালমনিরহাটের ধারা পল্লীর ৩৫ পরিবার

হাসানুজ্জামান হাসান, লালমনিরহাট:  লালমনিরহাটের ঐতিহ্যবাহী  কাকিনা ইউনিয়নের একটি গ্রাম মহিষামুড়ি। এ গ্রামেরই একটি অংশ পরিচিতি  পেয়েছে ধারা পল্লী নামে। তবে স্থানীয়রা  সেটিকে চেনেন ধারা বা ধারি পাড়া নামে। 

নাম করণের কারণ হলো এখানে বাঁশ থেকে ধারা তৈরি করেন ৩৫টি পরিবার। জীবিকা নির্বাহে মূল পেশা হিসেবে পাড়াটিতে ধারা তৈরির কাজে নিয়োজিত আছেন নারী পুরুষ ছোট বড় মিলে পরিবারগুলোর প্রায় ১২০ জন সদস্য। তবে ধারা তৈরির কাজটি করেন পরিবারের নারী সদস্যরা। বাঁশ ক্রয় ও তা কেটে উপযোগী কাঁচামাল তৈরি ও যোগানদানে কাজ করেন পুরুষ সদস্যরা। সহায়তা দেন পরিবারের ছোট-বড় অন্যান্য সদস্যরা। চলে জীবিকা, শিক্ষা ও সংসার। পাড়াটিতে গিয়ে দেখা যায় ধারা তৈরিতে ব্যস্ত ফরিদা বেগমসহ পাড়ার বিভিন্ন বাড়ীর লোকজন।

পাশেই কাঁচামালের (পাতি, কাবারি) যোগান দিচ্ছেন নিজ নিজ বাড়ির পুরুষ সদস্যরা। ফরিদা বেগমের বাড়ির উঠানে সাংবাদিকের উপস্থিতি জেনে ছুটে আসেন পাড়ার অনেকেই। কথা হয় ছামাদ আলী (৩৪), আজহার আলী(৩৮) ও ছকের আলীর (৬০) সাথে।

তারা জানান ১শ’ টাকা মূল্যের একটি বাঁশ (মাকলা) থেকে সাড়ে তিন হাত বাই আড়াই হাত মূল্যের ৩টি ধারা তৈরি হয় যা বিক্রি হয় ২শ’ টাকায়।  বেশি একটা লাভবান না হলেও একদিকে পৈতৃক পেশা অন্যদিকে কারো বাড়িতে কাজ না করে এ পেশাই ধরে রেখেছেন তারা।

তবে পরিবারের সব সদস্যের কাজের সুযোগ থাকায় পুষে নিতে পারছেন বলেও জানান তারা। তাছাড়া বাসা বাড়ির ছাদ দিতে ১শ’ থেকে ৫শ’ হাত লম্বা ধারা তৈরির অর্ডারও আসে তাদের কাছে। বাঁশের কেটে ফেলা অগ্রভাগের অংশ দিয়ে তৈরি হয় ঝাড়ু। সারা বছরই চলে ধারা তৈরি ও বিক্রির কাজ। গ্রাম্য হাট বাজার ও স্থানীয় আজিজ ও রাজ্জাক পাইকারের কাছে বিক্রি হয় এসব। তবে বেশি বিক্রি এবং দাম ভালো হয় ধান ও ভুট্টা জাতীয় ফসল উঠার সময়টায়।

এসব কাজের পুঁজি হিসেবে কখনও কখনও কেউ কেউ আবার পাইকারের কাছে আগাম টাকা নিয়ে থাকেন এতে করে প্রায় ২০% কম মূল্যে তা বিক্রি করতে হয়। আবার একটানা দীর্ঘ সময় বসে বসে কাজ করায় শরীরে ও  কোমরে ব্যথা দেখা দেয় বলে জানান তারা। এ ছাড়াও কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় কেটে যায় হাত এবং ছিঁড়ে যায় পরিধেয় পোশাকও। কিন্তু সংসার, সন্তান ও জীবিকার তাগিদে চালিয়ে যেতে হয় ধারা তৈরির কাজগুলো। পুঁজির স্বল্পতা রোধ, পেশাগত দক্ষতাবৃদ্ধি মূলক প্রশিক্ষণ, কাজের শেডঘর তৈরি, এ্যাপ্রোনসহ পেশার উন্নয়নে সরকারি বেসরকারি উদ্যোগের আশা করেন তারা।

এসব বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কালীগঞ্জের সমাজসেবা অফিসার সুকান্ত সরকার বাংলাদেশের আলোকে বলেন, প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শেষে আসন্ন বরাদ্দে ওই পল্লীর লোকজনকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসা হবে।