লকডাউন ঘিরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কড়া তল্লাশি, সতর্কতা ও গণপরিবহন সংকট
দূরপাল্লার বাস বন্ধে দুর্ভোগ, নিস্তব্ধ ঢাকা-থমথমে পরিবেশ
দিনভর ফাঁকা রাস্তাঘাট, কম যানবাহন, আতঙ্কগ্রস্ত নগরবাসী— ঢাকায় এক অনিশ্চিত নীরবতা
আসাদুল শেক: বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের ঘোষিত ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার রাজধানীজুড়ে বিশেষ সতর্কতা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখা গেছে। যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা, শনিরআখড়া, মাতুয়াইল ইউটার্ন, দোলাইরপাড় ও পোস্তগোলা ফ্লাইওভার এলাকায় সকাল থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি লক্ষ্য করা গেছে। র্যাব ও পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে প্রধান মহাসড়কগুলোতে।
গণপরিবহনে স্থবিরতা, দূরপাল্লার বাস চলাচল কম
সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দূরপাল্লার বাস চলাচল প্রায় বন্ধ থাকলেও দুপুরের পর কিছুটা গতি ফিরে আসে। তবুও লোকাল বাসের সংখ্যা ছিল অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেক কম। সরেজমিনে ঢাকা-মাওয়া সড়ক, পোস্তগোলা ফ্লাইওভার, দোলাইরপাড়, সায়েদাবাদ ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ঘুরে দেখা যায়, রাস্তাগুলো প্রায় ফাঁকা, নেই স্বাভাবিক যানচাপ। যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তার দিকে কিছু লোকাল বাস চলাচল করলেও দূরপাল্লার বাসের দেখা মেলেনি।
যাত্রীদের চরম ভোগান্তি
দূরপাল্লা ও সিটি সার্ভিস বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। এই সুযোগে সিএনজি অটোরিকশাচালকরা বাড়তি ভাড়া নিচ্ছেন। ৬০ বছর বয়সী আতিক বললেন, “জুরাইন থেকে শাহবাগ পিজি হাসপাতালে অসুস্থ মেয়েকে দেখতে যাচ্ছি, কিন্তু বাস না থাকায় সিএনজিতে যেতে হচ্ছে। চালকরা যা খুশি ভাড়া নিচ্ছে।”
বেসরকারি চাকরিজীবী আরমান বলেন, “অসুস্থ মাকে দেখতে শরীয়তপুর যেতে চেয়েছিলাম, কিন্তু বাস না থাকায় ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। জনগণকে জিম্মি করে আন্দোলন করা ঠিক নয়।”
বাস মালিক ও শ্রমিকদের বক্তব্য
সায়েদাবাদ আন্তজেলা বাস টার্মিনাল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহিদ আল লতিফ (খোকা) ও শ্রমিক কমিটির আহ্বায়ক আলমগীর হোসেন বলেন, “সকাল থেকে যাত্রীর চাপ না থাকায় দূরপাল্লার বাস তেমন ছাড়েনি। তবে বেলা বাড়ার সাথে কিছু বাস যাত্রী নিয়ে টার্মিনাল ছাড়ছে।”
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা
রাজধানীর ওয়ারী, যাত্রাবাড়ী, মাতুয়াইলসহ বিভিন্ন স্থানে মোটরবাইক ও প্রাইভেটকারে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। পুরো রাজধানীজুড়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। অনেক সিএনজি চালকও যাত্রী না পেয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. হারুন অর রশিদ বলেন, “আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিভিন্ন পয়েন্টে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। সন্দেহভাজনদের তল্লাশি করা হচ্ছে। সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে, এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।”
সব মিলিয়ে ‘লকডাউন’ ঘিরে আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাজধানী ঢাকায় ছিল ভীতসন্ত্রস্ত ও নিস্তব্ধ এক পরিবেশ— যেখানে গণপরিবহন ছিল অপ্রতুল, নিরাপত্তা ছিল সর্বোচ্চ, আর সাধারণ মানুষ পড়েছেন চরম দুর্ভোগে।
বিআলো/তুরাগ



