লাগাম টেনেও থামানো যাচ্ছে না বুড়িমারী স্থলবন্দরে চাঁদাবাজি
সজীব আলম, লালমনিরহাট: লাগাম টেনেও থামানো যাচ্ছে না লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দরে আসা পণ্যবাহী ট্রাক থেকে তোলা চাঁদাবাজি। প্রকাশ্যে দিনে দুপুরেও আদায় করা হচ্ছে চাঁদা । ট্রাক, ট্যাংকলড়ি ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির নামে প্রতিটি ট্রাক থেকে ৩০ টাকার রশিদে আদায় করা হচ্ছে ১৫০ টাকার অতিরিক্ত চাঁদা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব চাঁদাবাজি বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হলেও বেপরোয়া হয়ে এসব নির্দেশ মানছে না কেউই।
জানা গেছে, বুড়িমারী স্থলবন্দরের এই রুট দিয়ে প্রতিদিন ৬শ থেকে ৭শ’টি পণ্যবাহী ট্রাক নিয়মিত যাতায়াত করে। এই সুযোগে একটি চক্র এসব ট্রাক থেকে বিভিন্ন সমিতির রশিদ বই দেখিয়ে নামে বে-নামে আদায় করছে চাঁদার টাকা। চাঁদা না দিলে গাড়ি চালকদের গালিগালাজ ও গাড়ি থেকে নামিয়ে মারধর, এমনকি গাড়িতে আগুন দিয়ে চালককে পঙ্গু করারও ভয় দেখানো হয়। সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমতার হাত বদল হয়ে আরো বেপরোয়া ভাবে চলছে বন্দরের চাঁদাবাজি।
এদিকে স্থলবন্দরে চাঁদাবাজি বন্ধের দাবীতে বুড়িমারী স্থলবন্দর ট্রাক, ট্যাংকললড়ি ও কাভার্ডভ্যান মালিকদের একাংশ গত বৃহস্পতিবার (৮ মে) পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দেন। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জিল্লুর রহমান সরেজমিন পরিদর্শন করে চাঁদাবাজি বন্ধের নির্দেশ দিলেও তারা সেটি অমান্য করে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে চাঁদা আদায় করে আসছে। চাঁদা দিতে আপত্তি বা প্রতিবাদ জানালে চালক কিংবা মালিককে আটকে রেখে হেনস্তা ও নির্যাতন করা হচ্ছে।

এদিকে গত ৫ই মে ৩০টাকার রশিদে ১৫০টাকার অতিরিক্ত চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ট্রাক মালিক আব্দুস সালেককে আটকে রেখে চাঁদা আদায়কারীর পক্ষে লোক জড়ো হয়ে তাকে মারধর করা হয়। চাঁদা না দিলে এই রুটে ব্যবসা করতে পারবে না বলেও তাকে হুমকি দেওয়া হয়। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে।
ট্রাক মালিকরা জানান, এই বন্দরে ট্রাক প্রতি ৩০ টাকার রশিদ প্রদান করে অনৈতিকভাবে ১৫০ টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। বিগত সময়ে এই চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে শ্রমিকদের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় ঘটে। ওই ঘটনায় ইউএনওসহ দুইজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পাটগ্রাম থানা পুলিশ দিনভর অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনাও ঘটেছে। এতকিছুর পরও চাঁদাবাজি বন্ধ হয়নি। দিন দিন চাঁদাবাজির শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে উঠছে বুড়িমারী স্থলবন্দরে।
হাফেজ বজলুর রহমান (রহঃ) পরিবহনের মালিক আব্দুস ছালেক বলেন, ‘সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে জোর করে চাঁদা নেওয়া হচ্ছে, যার কোনো বৈধতা নেই। চাঁদা না দিলে গাড়ির চালক ও মালিকদের হেনস্তা করা হয়। সরকারিভাবে বৈধতা থাকলে আমরা টাকা দিতে রাজি আছি।’
তবে লালমনিরহাট ট্রাক, ট্যাংকলরি ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জালাল উদ্দিন চাঁদাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘শ্রম অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধন নিয়ে চালক, সহকারী চালক ও ট্রাক বন্দবস্তকারীদের কল্যাণ ফান্ডের জন্য ৩০ টাকা ও গাড়ির মালিক এবং গাড়ি নিরাপদে পাঠানোর কাজে নিয়োজিত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জন্য ১২০ টাকা করে নেওয়া হয়। যারা অভিযোগ করেছে তারা আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর। আমাদের সংগঠনকে বিতর্কিত করতে মিথ্যা অভিযোগ করেছে তারা।
এ বিষয়ে পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান বলেন, বুড়িমারী স্থলবন্দরে গিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। সংগঠনের সভাপতিকে বলা হয়েছে চাঁদাবাজি বন্ধ না হলে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিআলো/শিলি



