শোভাযাত্রা ছাড়াই সমাপ্তি ঘটছে দুর্গাপূজার

শোভাযাত্রা ছাড়াই সমাপ্তি ঘটছে দুর্গাপূজার

 

নিজেস্ব প্রতিবেদক : বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটছে আজ। তবে বিগত বছরের মতো এবার বিজয়ার শোভাযাত্রা হবে না।

সোমবার সকাল ৯টা ৫৭ মিনিট থেকে দশমী বিহিত পূজার লগ্ন শুরু হবে। পূজা শেষে দর্পণ বিসর্জনের মধ্যদিয়ে পূজার ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে। এরপর রাজধানীর বিভিন্ন মন্দির থেকে তাদের সুবিধামতো সময়ে বুড়িগঙ্গা বা নিকটবর্তী কোনো জলাধারে প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হবে।

চন্ডীপাঠ, বোধন এবং দেবীর অধিবাসের মধ্য দিয়ে গত বৃহস্পতিবার থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুরু হয়েছিলো দুর্গাপূজা। এবার দেবী এসেছিলেন দোলায় চড়ে, যাবেন হাতিতে চড়ে।

এবার মহামারী করোনার সংক্রমণ এড়াতে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত করা হয়। উৎসব সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো পরিহার করে সাত্ত্বিক পূজায় সীমাবদ্ধ রাখতে হবে বিধায় এবারের দুর্গোৎসবকে শুধু ‘দুর্গাপূজা’ হিসেবে অভিহিত করে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ।

এর আগে বেশকিছু বিধি নিষেধও দেয়া হয়। মন্ডপে দর্শনার্থীদের উপস্থিতি সীমিত করা ও সন্ধ্যায় আরতির পরই বন্ধ করে দেয়া হয় পূজামন্ডপ। ছিল না সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ধুনুচি নাচের প্রতিযোগিতা। জনসমাগমের কারণে স্বাস্থ্যবিধি যাতে ভঙ্গ না হয় সেদিকে খেয়াল রেখেই প্রসাদ বিতরণ ও বিজয়া দশমীর শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করা হয়। পূজার সময় বেশির ভাগ ভক্তরা এবার অঞ্জলি নিয়েছেন ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে।

এদিকে বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকানুযায়ী রোববার ভোর ৫টা ১৭ মিনিট থেকে সকাল ৭টার মধ্যে দুর্গাদেবীর মহা নবমী কল্পারম্ব ও বিহিত পূজা প্রশস্ত সম্পন্ন হয়। অনেকের বিশ্বাস মহানবমীর দিন হচ্ছে দেবী দুর্গাকে প্রাণ ভরে দেখে নেওয়ার ক্ষণ। এই দিন অগ্নিকে প্রতীক করে সব দেবদেবীকে আহুতি দেওয়া হয়। অগ্নি সব দেবতার যজ্ঞভাগ বহন করে যথাস্থানে পৌঁছে দিয়ে থাকেন। নবমী পূজা হচ্ছে দুর্গাপুজার অন্তিম দিন। পরের দিন কেবল বিজয়া ও বিসর্জনের পর্ব। নবমী রাত তাই বিদায়ের অমোঘ পরোয়ানা নিয়ে হাজির হয়।

অন্যদিকে দশমীর দিন আজ সকাল ৬টা ৪৫ মিনিট পর শ্রী শ্রী দেবীর দশমীবিহিত পূজারম্ভ প্রতিমা- নিরঞ্জন ও শান্তির জল প্রদান করা হয়। দশমী থাকবে আগের দিন সকাল ১১টা ১২ মিনিট থেকে পরের দিন আজ সকাল ১১টা ৩১ মিনিট পর্যন্ত। দর্পণ বিসর্জনের পর বিকেলে দেবী দুর্গা ও অন্যান্য দেব-দেবীর বিসর্জন দেয়া হবে। এর মধ্য দিয়ে দেবী মর্ত্য ছেড়ে স্বর্গে ফিরবেন।

শ্রী সমীরেশ্বর ব্রহ্মচারীর কথায়, বিজয়া দশমীর দিন সংক্ষিপ্ত পূজার পর দর্পণ বিসর্জন হয়। কোন কোন জায়গায় দেবীর অপরাজিতা পূজাও হয়। এই দিনেই রাবণ বধের জন্য দশেরা উৎসবও পালিত হয়। এই দিনটিতে অসুর নিধনের পর অসুরের রক্ত দিয়ে দেবতারা বিজয় উৎসব পালন করে ছিলেন।

পুরাণ মতে, মহিষাসুরের সঙ্গে ৯ দিন ৯ রাত যুদ্ধের পর দশম দিনে জয়ী হন দেবী দুর্গা। এজন্যই বিজয়া। সেই লোকাচার বাংলার ঘরে ঘরে সিঁদুর খেলা হিসেবে পরিণত হয়েছে। সিঁদুর খেলার পাশাপাশি চলে কোলাকুলিও। তবে করোনা মহামারির কারণে এবার কোলাকুলি হবে না।

একইভাবে এবার দুর্গাপূজায় শোভাযাত্রার মাধ্যমে প্রতিমা বিসর্জন হবে না। বিসর্জনের জন্য একটি ট্রাকে একসঙ্গে অনেক মানুষ গেলেও এবার একটি ট্রাকে প্রতিমা বিসর্জনের জন্য ১০ জন যেতে পারবেন। এর বাইরে অতিরিক্ত যাওয়া যাবে না বলে এর আগে নির্দেশনা প্রদান করা হয়।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জী বলেন, ‘সোমবার বিজয়া দশমীর দিন শোভাযাত্রা পরিহার করে প্রতিমা বিসর্জনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ডপ বা মন্দির কর্তৃপক্ষ স্বউদ্যোগে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিমা বিসর্জনের ব্যবস্থা নেবেন।’

বিজয়া দশমী উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটির দিন। পূজা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী প্রদান করেছেন। বিজয়া উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্যান্য বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিও বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে। এছাড়া জাতীয় দৈনিকগুলো এ উপলক্ষে বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করবে।

এ বছর সারাদেশে ৩০ হাজার ২২৩টি মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত বছর সারাদেশে দুর্গাপূজার মন্ডপের সংখ্যা ছিল ৩১ হাজার ৩৯৮টি। গতবছরের তুলনায় এবার ১ হাজার ১৭৫টি মন্ডপে পূজা কম হচ্ছে। অন্যদিকে ঢাকা মহানগরে এ বছর পূজা মন্ডপের সংখ্যা ২৩৩টি। গত বছর এ সংখ্যা ছিলো ২৩৭টি। আর ঢাকা জেলায় পূজা হচ্ছে ৭৪০টি।

বিআলো/শিলি