শিশুশ্রম প্রতিরোধে সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা জোরদারের আহ্বান
এডুকো ও ক্ল্যাপ আয়োজিত নীতি প্রস্তাব শেয়ারিং অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞদের মত
বিশেষ প্রতিনিধি: শিশুশ্রম নির্মূল কার্যক্রম জোরদার করতে সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থার আওতা ও বরাদ্দ বাড়ানোর সুপারিশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, শিশুদের সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আনতে বিদ্যমান ব্যবধান কমাতে হবে এবং অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত শিশুদের অন্তর্ভুক্ত করে একটি সমন্বিত সামাজিক সুরক্ষা কাঠামো গড়ে তুলতে হবে।
বুধবার (আজ) রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশে শিশু শ্রমিকদের পরিবারকে সহায়তার লক্ষ্যে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি শক্তিশালীকরণে প্রস্তাবিত নীতি’ শীর্ষক নীতি শেয়ারিং অনুষ্ঠানে এসব মতামত উঠে আসে। এডুকো বাংলাদেশ ও চাইল্ড লেবার ইলিমিনেশন প্ল্যাটফর্ম (ক্ল্যাপ) যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এডুকো বাংলাদেশের ব্যবস্থাপক আফজাল কবির খান। নীতি প্রস্তাব উপস্থাপন করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
প্রস্তাব উপস্থাপনকালে ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার, আইন ও সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে এখনও লাখো শিশু অনানুষ্ঠানিক খাতে শ্রমে নিয়োজিত। প্রায় ৩৫ লাখ শিশু বিভিন্ন ধরনের কাজে যুক্ত থাকলেও মাত্র ১৭ লাখ শিশুর তথ্য নথিভুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে এক লাখ শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত।
তিনি জানান, কাজের সুযোগ বেশি থাকায় শহরাঞ্চলে শিশুশ্রমের হার তুলনামূলক বেশি হলেও গ্রামাঞ্চলেও কৃষিখাত ও মৌসুমি কাজে শিশুদের যুক্ত হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। শিশু শ্রমিকদের মধ্যে ৬৬ দশমিক ৬ শতাংশ শিল্পখাতে, ৪৪ দশমিক ৪ শতাংশ সেবা খাতে এবং ৩৮ দশমিক ৮ শতাংশ কৃষিখাতে নিয়োজিত। বিপজ্জনক শিশুশ্রমের হার শিল্পখাতে সর্বোচ্চ ৫৪ দশমিক ৭ শতাংশ, সেবা খাতে ২৯ দশমিক ৯ শতাংশ এবং কৃষিখাতে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ।
তিনি আরও বলেন, স্কুলগামী শিশুদের মধ্যে শিশুশ্রমের প্রবণতা তুলনামূলক কম। যেখানে স্কুলগামী শিশুদের মাত্র ১ শতাংশ ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে যুক্ত, সেখানে স্কুলের বাইরে থাকা শিশুদের ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত। শিশুশ্রম নিরসনে সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ ও আওতা বাড়ানো জরুরি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. কামাল উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী শিশুশ্রম, শোষণ, পাচার ও সহিংসতার অবসান ঘটাতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। শিশুশ্রম নিরসনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মাধ্যমে একাধিক প্রকল্প ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
তিনি জানান, চলতি অর্থবছরে স্কুলগামী শিশুদের জন্য ৯টি কর্মসূচিতে ৯ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে, যা সামাজিক সুরক্ষা খাতের মোট বাজেটের ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ। তবে স্কুলের বাইরে থাকা শিশুদের জন্য পৃথক কোনো বরাদ্দ নেই। এ খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর সুপারিশ বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মো. আওরঙ্গজেব আকন্দ বলেন, শিশুশ্রম বন্ধে সর্বজনীন শিশু ভাতা ও পর্যাপ্ত সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি মানসম্মত শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়ানো, সব শিশুকে স্কুলে ফিরিয়ে আনা এবং পরিবারের প্রাপ্তবয়স্ক সদস্যদের জন্য উপযুক্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি জরুরি।
এডুকো বাংলাদেশের পরিচালক (প্রোগ্রাম) আব্দুর রহিম বলেন, শিশুদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী মানবাধিকার ও অর্থনীতিকে সুরক্ষা দেয়। তবে বর্তমানে দেশের সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা অতিমাত্রায় বিভক্ত ও সমন্বয়হীন। অনেক কর্মসূচির লক্ষ্য একে অপরের সঙ্গে মিলে গেলেও বাজেট ও আওতা দুটোই অপর্যাপ্ত। তাই সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
সভাপতির বক্তব্যে আফজাল কবির খান বলেন, শক্তিশালী সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা পারিবারিক দারিদ্র্য ও ঝুঁকি কমিয়ে শিশুশ্রম হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। একইসঙ্গে এটি শিশুদের স্কুলে ভর্তি ও পড়াশোনার ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করে। তাই সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়ানোর পাশাপাশি শিশু শ্রমিকদের পরিবারের প্রতি সহায়তা জোরদার করা অপরিহার্য।
বিআলো/তুরাগ



