সত্তরের ১২ নভেম্বর: ভয়াল ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণ হারায় দেড় লক্ষাধিক মানুষ
সামসুর রহমান সোহেল: ভয়াল ১২ নভেম্বর। ভোলাসহ উপকূলবাসীর জন্য বিভীষিকাময় এক দুঃস্বপ্নের দিন। ১৯৭০ সালের এই দিনে মহাপ্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস উপকূলীয় অঞ্চলে চালায় অকল্পনীয় ধ্বংসযজ্ঞ। মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয় বিশাল এলাকা। সেই রাতে দেড় লক্ষাধিক মানুষ প্রাণ হারায়। সহস্রাধিক মানুষ নিখোঁজ হন।
৫৫ বছর পেরিয়ে গেলেও সেই রাতের ভয়াবহ স্মৃতি আজও তাড়া করে বেড়ায় স্বজনহারা মানুষদের। মনে পড়লেই আঁতকে ওঠেন অনেকে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ১১ নভেম্বর সকাল থেকেই গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। পরদিন ১২ নভেম্বর আবহাওয়া আরো অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। মধ্যরাতে উত্তাল সমুদ্র ফুঁসে উঠে। তীব্র বেগে পর্বতসম ঢেউ ধেয়ে আসে উপকূলের দিকে। মুহূর্তে ডুবে যায় বসতঘর, ভেসে যায় মানুষ, গবাদিপশু, ঘরবাড়ি, ক্ষেতের সোনালী ফসল। পথে প্রান্তরে পড়ে থাকে অসংখ্য লাশ। শুধু ভোলাতেই প্রাণহানি ঘটে দেড় লক্ষাধিক মানুষের। উত্তাল মেঘনা ও খালবিলের পানিও পরিণত হয়েছিল লাশের স্তূপে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, নদীতে মাছ ধরা পর্যন্ত নিষিদ্ধ করে প্রশাসন।
নীলকমল ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. রতন সেই রাতের স্মৃতি তুলে ধরে বলেন, ‘তখন রমজান মাস, প্রচণ্ড শীত। রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। মধ্যরাতে মানুষের আর্তচিৎকারে ঘুম ভাঙে। দক্ষিণ দিক থেকে পানি আসার গর্জন শোনা যাচ্ছিল। মুহূর্তেই ঘর পানিতে ডুবে যায়। কেউ চনের চালা, কেউ টিনের চালা, কেউ গাছের ডালে, আবার কেউ যা পেয়েছে তাই ধরে বাঁচার শেষ চেষ্টা করেছে। তবু অনেকে রক্ষা পায়নি।’
জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও) পৃথিবীর সর্বাধিক প্রাণঘাতী ঘূর্ণিঝড়ের তালিকায় ১৯৭০ সালের এই ‘সাইক্লোন ভোলা’কে প্রথম স্থানে রেখেছে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ওই ঝড়ে বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২২৪ কিলোমিটার, আর জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা ছিল ১০ থেকে ৩৩ ফুট।
ঝড়টি আঘাত হেনেছিল তখনকার পূর্ব পাকিস্তানের ভোলা, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, পটুয়াখালী, বরগুনা ও চট্টগ্রামে। সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি ঘটে ভোলা জেলায়।
চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসনা শারমিন মিথি বলেন, ‘তখনকার সময়ে মানুষের কাছে আবহাওয়ার খবর পৌঁছানোর মতো প্রযুক্তি ছিল না। এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে। অগ্রিম সতর্কতা পৌঁছে যায় ঘরে ঘরে। পাশাপাশি আশ্রয়কেন্দ্রও যথেষ্ট রয়েছে। দুর্যোগমুখী সময়ে প্রশাসন সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে থাকে।’
বিআলো/ইমরান



