সনোলজিস্ট হয়ে কিডনির পাথর অপারেশন!

সনোলজিস্ট হয়ে কিডনির পাথর অপারেশন!

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : কুষ্টিয়া নিউ সান ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড (প্রা.) হসপিটালের ডা. হোসেন ইমামের ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে এক বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী রাজিয়া খাতুন (৭০)। 

জানা যায়, গত ৩ সেপ্টেম্বর পেটে ব্যথা নিয়ে মেহেরপুর থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেন তার স্ত্রীকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে কিডনিতে পাথর হয়েছে বলে জানান। ওই দিনই কুষ্টিয়া নিউ সান ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড (প্রা.) হসপিটালের এক দালাল হাসপাতাল থেকে অপারেশন করে দেওয়ার কথা বলে রোগীকে নিয়ে যায় কুষ্টিয়ার নিউ সান ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড (প্রা.) হসপিটালে। ওই দিনই বামপাশের কিডনির পাথরের অপারেশন করে কুষ্টিয়া নিউ সান ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড (প্রা.) হসপিটালের ডা. হোসেন ইমাম। 

অপারেশনের পর থেকেই রোগীর অবস্থা খারাপ হতে থাকে। রোগীর অবস্থা বেগতিক দেখে রোগীর স্বজনদের ভুল বুঝিয়ে ১৩ সেপ্টেম্বর রিলিজ করে দেওয়া হয়। বলা হয়, বাড়িতে বিশ্রাম নিলেই সুস্থ হয়ে যাবে। কিন্তু বাড়িতে যাওয়ার পরে রোগীর অবস্থা আরো খারাপ হয়। পরের দিন ১৪ সেপ্টেম্বর রোগীর অবস্থা আরো খারাপ হলে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রোগীর অবস্থা খারাপ দেখে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে রেফার্ড করে। 

১৫ই সেপ্টেম্বর রোগীকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন স্বজনেরা। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসকরে পরামর্শে এক্স-রে করা হলে এক্স-রে রিপোর্টে দেখা যায় রোগীর বামপাশের কিডনিতে পাথর রয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য চিকিৎসকরা তাকে বাইরে থেকে আরেকটি এক্স-রে করার পরামর্শ দেন। বাইরে থেকে করা এক্স-রের রিপোর্টেও বামপাশের কিডনিতে পাথর ধরা পড়ে। বর্তমানে রোগী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। কর্তব্যরত চিকিৎসকরা রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। 

এদিকে কুষ্টিয়া নিউ সান ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড (প্রা.) হসপিটালের ডা. হোসেন ইমাম একজন সনোলজিস্ট হয়ে কীভাবে কিডনির পাথর অপারেশন করলেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কিডনির পাথরের অপারেশন করার মতো নিউরোলজিস্ট কুষ্টিয়ায় নেই। যে দু-একজন আছে তারাও আসে ঢাকা থেকে। 

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়া শহরের নিউ সান ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ডি (প্রা.) হসপিটালের ডা. হোসেন ইমাম দীর্ঘদিন যাবৎ দালালের মাধ্যমে জেনারেল হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে নিয়ে চিকিৎসা করেন তার নিজ হসপিটালে। এদিকে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না হয়েও কিডনির পাথরের অপারেশন করে, মারাত্মক অপরাধ করেছেন বলে মত দেন অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। 

রোগীর স্বামী বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেন বলেন, নিউ সান ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড (প্রা.) হসপিটালের ডা. হোসেন ইমামের ভুল অপারেশনের কারণে আমার স্ত্রী আজ মৃত্যু শয্যায়। আমি ওই ডাক্তারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।

কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডা. রওশন আরা বেগম জানান, এ ধরনের ঘটনা ঘটলে এবং অপরাধ প্রমাণিত হলে  কুষ্টিয়া নিউ সান ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড (প্রা.) হসপিটাল বন্ধ করে দেওয়া হবে এবং ওই প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত চিকিৎসকদের শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। এ বিষয়ে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক মো. আসলাম হোসেন জানায়, এই রকম ঘটনা ঘটলে সিভিল সার্জনের সাথে আলোচনার মাধ্যমে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।