স্বাস্থ্যবিধি মানতে কঠোর ক্যামব্রিয়ান স্কুল এন্ড কলেজ

স্বাস্থ্যবিধি মানতে কঠোর ক্যামব্রিয়ান স্কুল এন্ড কলেজ

***সরেজমিন পরিদর্শন

বিশেষ প্রতিনিধি: দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় সর্বপ্রথম ডিজিটাল পদ্ধতিতে শ্রেণিশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিখ্যাত রাজধানীর ক্যামব্রিয়ান স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ তানভীর (আইডি নং-৬৪৬)। কুমিল্লার দেবিদ্বার এলাকা থেকে আসা তানভীর রাজধানীর নর্দায় আজিজ সড়কে অবস্থিত ক্যামব্রিয়ান কলেজে (তিন নম্বর ক্যাম্পাস) উচ্চ মাধ্যমিক বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। করোনা মহামারির দীর্ঘ ১৭ মাস তানভীরের পক্ষে শারীরিক উপস্থিতিতে ক্লাস করা সম্ভব হয়নি। তবে বন্ধের দীর্ঘসময়ে তানভীর দেবিদ্বার থাকলেও অনলাইনে একাদশ শ্রেণির ক্লাস-পরীক্ষা সবই চলেছে তার কোনো প্রকার বাধা-বিঘ্ন ছাড়াই। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর শারীরিক উপস্থিতিতে ক্লাস করার আনন্দে উৎফুল্ল তানভীর অনুভব করছে কলেজে ভর্তির প্রথম দিনের আনন্দ।  

করোনায় সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস হচ্ছে কি না প্রশ্নের উত্তরে তানভীর বলে, আমাদের ক্যাম্পাসই শুধু নয়, নর্দা ও বাঁশতলায় জামালপুর টাওয়ারে ক্যামব্রিয়ানের মূল ক্যাম্পাসে শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। স্বাস্থ্যবিধি মানতে প্রথম দুই/এক দিন কষ্ট হলেও এখন অভ্যাস হয়ে গেছে। 

শুধু তানভীরই নয়, জামালপুর টাওয়ারে ক্যামব্রিয়ানের মূল ক্যাম্পাসের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী আবিরও করোনা মহামারি সময়ের ‘নিউ নরমাল লাইফে’ মুখে মাস্ক এঁটেই সহপাঠীর সঙ্গে খেলছিল শিশুতোষ অভ্যাসে। মুখে মাস্ক নিয়ে ক্লাস করতে, খেলতে অসুবিধা হয় না-প্রশ্নে তানভীরের স্পষ্ট উত্তর-এখন করোনা চলছে। এছাড়া কোনো উপায় নেই।

জামালপুর টাওয়ার ক্যাম্পাসে অভিভাবকদের জন্য নির্ধারিত স্থানে অপেক্ষমাণ একাধিক অভিভাবকও করোনাকালে শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনায় কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। 

তারা বলেন, স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনসহ সরকারি নির্দেশনা শতভাগ মানার পাশাপাশি করোনাকালীন সময়ে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায় ভার্চুয়ালি মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিয়মিত মোটিভেশনাল ক্লাস শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষকদেরও করোনাভাইরাস বিষয়ে সচেতনতা ও প্রতিরোধে উজ্জীবিত করেছে। 

তারা আরো বলেন, দীর্ঘদিন পর শারীরিক উপস্থিতিতে শ্রেণিশিক্ষা কার্যক্রম শুরু হলেও ডিজিটাল শিক্ষাব্যবস্থায় অভ্যস্থ ক্যামব্রিয়ানের শিক্ষার্থীরা করোনা শুরুর প্রথম থেকেই অনলাইন ক্লাসে যুক্ত ছিল শতভাগ।  

করোনা সংক্রমণের হার কমে আসায় সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর ডিজিটাল  শিক্ষাব্যবস্থার জন্য সমাদৃত ক্যামব্রিয়ান স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষাকার্যক্রম কেমন চলছে- দৈনিক বাংলাদেশের আলো’র পক্ষে তা সরেজমিন পরিদর্শন করা হয়। জামালপুর টাওয়ারে অবস্থিত মূল ক্যাম্পাস, কাঁলাচাঁদপুরে সাত নং ক্যাম্পাস ও নর্দার আজিজ সড়কে তিন নম্বর ক্যাম্পাস পরিদর্শন করা হয়। পরিদর্শনের সময় পরিচয় গোপন রেখে কথা হয় শিক্ষার্থী তানভীর, আবির ও অভিভাবকদের সঙ্গে। নাম-পরিচয় গোপন রাখার শর্তে অভিভাবকদের নাম প্রকাশ করা হলো না।    

ক্যামব্রিয়ান স্কুল এন্ড কলেজ, ঢাকা বিএসবি ফাউন্ডেশন পরিচালিত একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ক্যামব্রিয়ান ছাড়াও এই বিএসবি ফাউন্ডেশনের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে ক্যামব্রিয়ান কলেজ, চট্টগ্রাম; আখাউড়া ক্যামব্রিয়ান কলেজ; কিংস কলেজ; মেট্রোপলিটন কলেজ; উইনসাম কলেজ ও নর্থ সিটি কলেজ। 

ক্যামব্রিয়ানের মতো ফাউন্ডেশনের অধীন অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কি না প্রশ্নের উত্তরে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান লায়ন এম.কে বাশার বলেন, স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে আপসের কোনো জায়গা নেই। এটি স্বাস্থ্যগত বিষয়। করোনার অভিঘাতে দেশের শিক্ষার পাশাপাশি ক্যামব্রিয়ানের যে ক্ষতি হয়েছে-আমাদের ভুলে তা আরো বেড়ে উঠুক-এমন ঝুঁকি আমরা নিতে পারি না। 

প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের বিষয়টি কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়-প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে একজন ভাইস-প্রিন্সিপাল আছেন। দিন শেষে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠান প্রধান প্রতিটি দিনের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা সংক্রান্ত সকল তথ্য কেন্দ্রীয়ভাবে আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার ইত্যাদি গ্রুপে শেয়ার করেন। গুগুল মিটে আমাদের পেইড লিংক রয়েছে। যেখানে প্রায় ৫০০ শিক্ষক একই সঙ্গে বসে প্রয়োজনীয় সব বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। স্বাভাবিকভাবে আমিও প্রতিটি গ্রুপে যুক্ত রয়েছি। ফলে প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে সবসময়েই আপডেট রয়েছি।
বিশিষ্ট এই শিক্ষা উদ্যোক্তা জানান, করোনাভাইরাস দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে বিবেচনায় নিয়ে অনলাইন ও অফলাইন দুই পদ্ধতিতেই ব্যাপকভাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। 

অন্যদিকে ক্যামব্রিয়ান কলেজের পরিচালক মাহবুব হাসান লিংকন জানান, উল্লেখিত তিনটি ক্যাম্পাসের শতভাগ শিক্ষক ইতিমধ্যে করোনা টিকার ডাবল ডোজ সম্পন্ন করছেন। প্রতিটি ক্যাম্পাসেই শিক্ষার্থীর উপস্থিতি প্রায় ৯৫ শতাংশ। তবে করোনার কারণে গত বছর স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর প্রথম থেকে সপ্তম শ্রেণির প্রায় ৭০০ শিক্ষার্থী বেতন-ফি বকেয়া রেখে স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে প্রতিষ্ঠানকে আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। 

জ্যেষ্ঠ এই শিক্ষক বলেন, তার পরও শিক্ষার গুণগত মান বজার রাখা বা স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। আশা করি করোনার এই অন্ধকার  পেরিয়ে সুদিন আসবেই। 

এদিকে পরিদর্শনের দিন গত শনিবার সকাল ১০টায় ক্যামব্রিয়ান স্কুল এন্ড কলেজের তিন নম্বর ক্যাম্পাসে যাওয়ার পথে আজিজ সড়কে কথা হয় শিক্ষার্থী তানভীরের সঙ্গে। এই ক্যাম্পাসে ঢোকার মূল প্রবেশপথের দরজার একপাশে টাঙ্গানো ছিল ‘নো মাস্ক  নো ক্লাস’ ব্যানার। পরিদর্শনের সময় শ্রেণি-শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়ে যাওয়ায় গেটের বাইরে অভিভাবকদের ভিড় দেখা যায়নি। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিটি ক্লাসে ছোট বেঞ্চে একজন ও বড় বেঞ্চে দুইজন করে শিক্ষার্থী বসেছিল। পুরো ক্যাম্পাস ঝকঝকে। কোথাও ময়লা কিংবা জমা পানি দেখা যায়নি। প্রাথমিক স্তরের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠানের ভেতরের ক্যান্টিন থেকে খাবার কিনছিল যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে। পরবর্তীতে কাঁলাচাঁদপুরের সাত নম্বর ক্যাম্পাস এবং মূল ক্যাম্পাসেও স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে প্রতিপালন করতে দেখা গেছে। 

তবে এই তিন ক্যাম্পাসের মধ্যে শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে শীর্ষে রয়েছে টাওয়ার ক্যাম্পাস। এই ক্যাম্পাসে ঢোকার মুখেই বসানো হয়েছে শিক্ষার্থীদের হাত ধোয়ার জন্য একাধিক বেসিন। শিক্ষার্থীরা ঢোকার সময় একবার ও বের হওয়ার সময় একবার হাত ধুঁয়ে যাচ্ছে। ঢোকার মুখে ডিজিটাল মেশিনে শিক্ষার্থী-শিক্ষক-অভিভাবক সকলের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে সাত নম্বর ক্যাম্পাসের প্রচেষ্টাতেও আন্তরিকতা লক্ষ্য করা গেছে।  

বিআলো/ইলিয়াস