সুখের খামার: দুই তরুণের স্বপ্নে বদলে যাচ্ছে গ্রামীণ কৃষি
নিজস্ব প্রতিবেদক: গরু রাখার ঘরকে সাধারণত গোয়ালঘর বলা হলেও বগুড়ার কাহালুর বাঁকাদিঘী পাড়ের সুখের খামারে এর নাম ‘কাউ স্টুডিও’। নান্দনিকভাবে নির্মিত এই স্টুডিওতে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির ছোট-বড় গরু। পাশের খোলা চত্বরে ঘুরে বেড়ায় ছাগল, ভেড়া, দুম্বা, গারল, ডরপারসহ আফ্রিকান প্রজাতির ভেড়া। রয়েছে মুরগি, ছাগল ও গরুর আরও কয়েকটি ঘর এবং মাটিছাড়া ঘাস উৎপাদন কেন্দ্র।
সুখের খামারের সহ-প্রতিষ্ঠাতা দুই তরুণ জোবায়ের ইসলাম ও তাসদীখ হাবীব। অগ্রহায়ণের এক দুপুরে তাদের ‘কাউ স্টুডিওর’ রহস্য জানতে গেলে জানা যায়—দুই বিঘার লাইভস্টক সেকশনে ৫০টি গরু এবং শতাধিক ছাগল-ভেড়া লালন-পালন করছেন তারা। খামারের আওতায় আছে ১২ বিঘা ধানক্ষেত, দুই বিঘার পুকুর, এক বিঘার কলাবাগান এবং আধা বিঘার এগ্রো রিসোর্ট। পুরো ব্যবস্থাপনায় কাজ করছেন ১৯ কর্মী।
জোবায়ের জানান, ২০১৬ সাল থেকে স্বপ্নের খামার গড়তে শুরু করলেও ২০২০ সালেই আনুষ্ঠানিক যাত্রা হয়। ঢাকার সরকারি তিতুমীর কলেজ থেকে বিবিএ ও এমবিএ শেষ করে ব্যবসায় যুক্ত হলেও নিরাপদ খাদ্যের অভাব দেখে অনলাইন শপ বন্ধ করে দেন তিনি। এরপর পরিবার নিয়ে ফিরে আসেন গ্রামে এবং শুরু করেন কৃষি খামারের পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম।
তিনি বলেন, “ঢাকা থেকে একজন শিক্ষিত তরুণ গ্রামে এসে খামার করছে—এটা দেখে অনেকে অবাক হয়। শুরুতে নানা সমস্যাও হয়েছে, বিশেষ করে গরু-ছাগল কেনাবেচায় লোকসানও গুনতে হয়েছে। তবু হাল ছাড়িনি।”
ধানক্ষেত পরিদর্শনের সময় জোবায়ের জানান, সুখের খামারের পাশাপাশি তারা গড়ে তুলছেন ‘সুখের খামার এগ্রো ভিলেজ’ নামের বিশাল প্রকল্প। ৩০ বিঘা জমির ওপর নির্মিত এ প্রকল্পে থাকছে সমন্বিত কৃষি খামার, এগ্রো রিসোর্ট, প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, ফাউন্ডেশন, মসজিদ ও হাফেজি মাদ্রাসা। জমি কেনা সম্পন্ন হয়েছে; ২০২৭ সালের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে জানান তারা।
প্রতিষ্ঠাতারা বলেন, প্রকল্পে যুক্ত পার্টনাররা পাবেন জমির মালিকানা, ভিলেজের আয়ের অংশ, বছরে তিন দিনের বিনামূল্যে রিসোর্টে থাকা, স্বল্পমূল্যে কৃষিপণ্য কেনার সুযোগ এবং মসজিদ-মাদ্রাসা ও ফাউন্ডেশনের আজীবন দাতা সদস্যপদ।
সুখের খামার রিসোর্টে বসেই জোবায়ের বলেন, “কৃষিক্ষেত্রে শিক্ষিত ও তরুণদের অংশগ্রহণ কম। আমরা চাই তারা এগিয়ে আসুক। এতে কৃষিনির্ভর অর্থনীতি শক্তিশালী হবে। আমাদের লক্ষ্য—‘ফার্মিং টু ডাইনিং’, অর্থাৎ নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন ও সরবরাহ নিশ্চিত করা।”
তিনি আরও জানান, তাদের উদ্যোগে স্থানীয়দের আর্থিক ও সামাজিক উন্নয়ন ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে, যা ভবিষ্যতে আরও ব্যাপক হবে।
বিআলো/এফএইচএস



