স্ট্রোক প্রতিরোধ করুন: লক্ষণ দেখেই ব্যবস্থা নিন
বিআলো ডেস্ক: স্ট্রোক মস্তিষ্কে হঠাৎ রক্ত চলাচল বন্ধ বা রক্তনালী ফেটে যাওয়ার কারণে ঘটে। দ্রুত চিকিৎসা না দিলে পঙ্গুত্ব বা মৃত্যু ঘটতে পারে। তবে প্রাথমিক লক্ষণ শনাক্ত ও সঠিক চিকিৎসা দ্রুত নিলে রোগীর জীবন এবং স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ফিরে আসার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।
স্ট্রোক কী এবং এর প্রকারভেদ: স্ট্রোক মস্তিষ্কের কোষে রক্ত সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হলে বা রক্তনালী ফেটে গেলে হয়। স্ট্রোক তিন প্রকার-
মাইল্ড স্ট্রোক: রক্তচলাচল সাময়িক বন্ধ হয়, যা বড় স্ট্রোকের পূর্বাভাস হতে পারে।
ইস্কেমিক স্ট্রোক: মস্তিষ্কে বা শরীরের অন্যান্য স্থানে রক্ত জমাট বাঁধে।
হেমোরেজিক স্ট্রোক: রক্তনালী ফেটে রক্তপাত হয়।
স্ট্রোকের ক্ষতির মাত্রা নির্ভর করে মস্তিষ্কের কোন অংশে এবং কতটা বিস্তৃতভাবে এটি ঘটেছে।
ঝুঁকির কারণ:
উচ্চ রক্তচাপ, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ও কোলেস্টেরল।
মানসিক চাপ, অতিরিক্ত টেনশন, অবসাদ।
স্থূলতা, দীর্ঘসময় শুয়ে থাকা বা অচল জীবনধারা।
অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস (তেল, চিনি, ভাজা খাবার)।
ধূমপান, মদ্যপান ও মাদক।
হৃদরোগ বা পরিবারে স্ট্রোকের ইতিহাস।
সতর্কতার লক্ষণ: FAST সূত্র মনে রাখুন-
F (Face): মুখের একপাশ ঝরে বা বেঁকে গেছে।
A (Arm): হাত দুর্বল বা ওঠাতে পারছেন না।
S (Speech): কথা জড়ানো বা অস্পষ্ট।
T (Time): এই লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে হাসপাতালে নিন।
অতিরিক্ত লক্ষণ: চোখে ঝাপসা, ভারসাম্য হারানো, হঠাৎ মাথা ঘোরা, অজ্ঞান হওয়া, তীব্র মাথা ব্যথা, বমি বা খিঁচুনি।
করণীয়:
রোগীকে বিছানায় বা মেঝেতে শুইয়ে রাখুন।
গায়ে থাকা কাপড় ঢিলেঢালা করুন।
পানি, খাবার বা ওষুধ দেবেন না।
শান্ত রাখুন, আশেপাশে ভিড় বা কান্নাকাটি না করুন।
দ্রুত অ্যাম্বুলেন্স বা হাসপাতালে নিয়ে যান।
আগের চিকিৎসার ফাইলপত্র সঙ্গে নিন।
চিকিৎসা ও সময়ের গুরুত্ব:
স্ট্রোকের প্রথম ৩–৪ ঘণ্টা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
ইস্কেমিক স্ট্রোক: এই সময়ে থ্রম্বোলাইটিক ওষুধ প্রয়োগ করা হয়।
৮-১৬ ঘণ্টার মধ্যে: মেকানিক্যাল থ্রম্বেকটমি ব্যবহার করে রক্তনালী পরিষ্কার করা হয়।
হেমোরেজিক স্ট্রোক হলে প্রয়োজনে মস্তিষ্কের চাপ কমাতে অস্ত্রোপচার।
সময়মতো চিকিৎসা পেলে মৃত্যুর ঝুঁকি কমে এবং রোগী স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরতে পারে।
প্রতিরোধ ও স্বাস্থ্যকর জীবনধারা:
নিয়মিত ব্যায়াম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস।
ধূমপান, মদ্যপান ও মাদক এড়ানো।
উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা।
প্রতিদিন ৬-৮ ঘণ্টা ঘুম।
প্রতি ছয় মাস অন্তর স্বাস্থ্য পরীক্ষা।
স্ট্রোকের প্রাথমিক ৩–৪ ঘণ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দ্রুত চিকিৎসা নিলে পঙ্গুত্ব ও মৃত্যু ঝুঁকি কমে। তাই সতর্কতা, দ্রুত সনাক্তকরণ এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা রোগীর জীবন বাঁচাতে এবং স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরিয়ে আনতে সবচেয়ে কার্যকর। সূত্র: বিবিসি
বিআলো/শিলি



