• যোগাযোগ
  • অভিযোগ
  • ই-পেপার
    • ঢাকা, বাংলাদেশ
    • যোগাযোগ
    • অভিযোগ
    • ই-পেপার

    আর্থিক খাতের চ্যালেঞ্জে উন্নয়ন মন্থর হবে 

     dailybangla 
    22nd May 2024 9:42 pm  |  অনলাইন সংস্করণ

    ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ: বাংলাদেশের ধারাবাহিক উন্নয়নের ফলে আমরা মোটামুটি সন্তোষজনক অবস্থানে চলে এসেছি। যে ধারাবাহিকতায় আমাদের প্রবৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছিল, এটা অনেকটা থমকে গেছে। এর কারণও আছে। বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ আছে।

    কিছু চ্যালেঞ্জ দেশের বাইরের, কিছু দেশের অভ্যন্তরীণ। বাইরের চ্যালেঞ্জগুলো এখনো আছে। এটা শুরু হয়েছে কভিড থেকে, তারপর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ, তেলের মূল্যবৃদ্ধি। সেগুলো থাকবে, সেগুলো বাংলাদেশকে মোকাবেলা করতে হবে। কিন্তু আমাদের ভেতরের চ্যালেঞ্জগুলো সবচেয়ে বেশি, আরো কঠিন এবং জটিল। এগুলো দূর করতেই হবে।

    আমি চারটি বিশেষ চ্যালেঞ্জ দেখছি। একটা হলো মূল্যস্ফীতি। মূল্যস্ফীতি দিন দিন বেড়েই চলেছে। দ্বিতীয়ত, ব্যাংকিং খাত- সার্বিকভাবে আর্থিক খাতের সংকট। এখানে ব্যাংকিং খাতে সবেচেয়ে বেশি। ব্যাংকিং খাতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। তৃতীয়ত, প্রবৃদ্ধি মন্থর হয়ে গেছে। প্রবৃদ্ধি গ্রোথ অনেক কমে যাচ্ছে। আর চতুর্থত, সবচেয়ে বড় একটা শঙ্কার বিষয় হলো কর্মসংস্থানের অপ্রতুলতা। কর্মসংস্থান বাড়ছে না। অথচ দেশের বিশাল জনশক্তি, বিশেষ করে বিশাল যুবশক্তি বেকার হয়ে বসে আছে। তাদের যোগ্যতা সত্ত্বেও চাকরি পাচ্ছে না। এই চারটি সমস্যা আমাদের খুব প্রকট হয়ে দেখা দিচ্ছে।

    আর্থিক খাতের চ্যালেঞ্জে উন্নয়ন মন্থর হবেএর সঙ্গে আরো কিছু সমস্যা ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে- জ্বালানি সংকট, জ্বালানি সমস্যা। বিশ্বব্যাপী জ্বালানির দাম বেড়ে গেছে। এখন বিদ্যুতের লোডশেডিং নিয়ে আমরা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। অন্যদিকে বাইরে থেকে যে জ্বালানি আনব, সেখানে আবার ডলারের সংকট আছে। ডলারের সংকট মানে রিজার্ভের অপ্রতুলতা। সেটাও আমাদের জন্য একটা বড় সমস্যা।

    আর দুটি সমস্যা আমি মনে করি, মুদ্রাপাচার এবং হুন্ডির দৌরাত্ম্য।

    আমরা দেখছি, বাংলাদেশ ব্যাংক টাকার অবমূল্যায়ন করছে। সঙ্গে সঙ্গে হুন্ডির রেট বেড়ে যাচ্ছে। এর সঙ্গে আরেকটা বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। সেটা হচ্ছে আমাদের শিল্প বিকাশের সীমাবদ্ধতা। আমাদের শিল্পের ভিত্তিটা অনেক ছোট। আমরা সিমেন্ট, স্টিল, গার্মেন্ট শিল্পসহ কয়েকটি বৃহৎ শিল্পের বিকাশ দেখছি। আমাদের ছোট-মাঝারি শিল্পের কিন্তু বিকাশ হয়নি। এই খাতে বহু প্রয়োজনীয় পণ্য তৈরি হয়। বাংলাদেশই বিরাট জনসংখ্যার দেশ, এখানে কিন্তু এখনো আমরা প্রবৃদ্ধির জন্য কৃষির ওপর নির্ভরশীল। অন্যদিকে কৃষির সঙ্গে সম্পর্কিত শিল্পের বিকাশ দেখতে পাচ্ছি না। এদিকেও আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে।

    আমাদের খুঁজতে হবে, সমস্যা কেন হচ্ছে? গত দুই বছরের বেশি সময় থেকে আমরা দেখছি, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সরকারের বিভিন্ন সংস্থা বিভিন্ন রকম নীতি ও কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। কিন্তু সেগুলো তেমন ফলদায়ক হচ্ছে না। মূল্যস্ফীতি কমেনি, কর্মসংস্থান বাড়েনি, বিনিয়োগ বাড়েনি। ছোট-মাঝারি শিল্প ঋণ পাচ্ছে না, খেলাপি ঋণ কমেনি। আমি বলব, ভুল পলিসি নিয়ে সেগুলো অ্যাপ্লাই করছে। সুতরাং পলিসিগুলো নেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যার গভীরে গিয়ে ভেবেচিন্তে পলিসি নিতে হবে।

    যেমন- বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হারের ক্ষেত্রে নীতি। বছর দুয়েক থেকেই টাকার অবমূল্যায়ন হচ্ছিল, কিন্তু টাকাকে ধরে রাখার জন্য ডলার বিক্রি করছে। প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার খোলাবাজারে বিক্রি করছে। তারপর সুদ নয়-ছয়ে রেখে দিয়েছি। তারপর করা হলো স্মার্ট রেট। এখন স্মার্ট রেট বাদ দিয়ে বাজারভিত্তিক করে দেওয়া হয়েছে। ব্যাংক একীভূতকরণের জন্য কথাবার্তা বলেছে। নীতি করেছে। নীতি স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়নি। এখন আবার বলছে, সব করা হবে না। এসব সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভেবেচিন্তে নেওয়া উচিত ছিল। এখন দেখা যাচ্ছে, ঘন ঘন আবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

    সম্প্রতি দেখেছি, ব্যবসায়ীরা এবং বিশেষ করে ব্যাংক মালিকরা; তাঁরা বলছেন যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত ঘন ঘন পরিবর্তন হচ্ছে। এই ঘন ঘন পরিবর্তন হলে তো ব্যবসা-বাণিজ্য-বিনিয়োগ সবই ঝুঁকিতে পড়বে। আমি মনে করি, জটিল সমস্যার মধ্যে নীতিগুলো খুব ভেবেচিন্তে করা।

    তবে দীর্ঘ সময় নিয়ে নিতে হবে, তা নয়। আমাদের দেশের অভিজ্ঞতা, বাইরের দেশের অভিজ্ঞতা আছে, এটা অ্যাপ্লাই করে শক্তভাবে কাজ করতে হবে। মূল্যস্ফীতি আবার বেড়ে যাচ্ছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক গতানুগতিক সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি করেছে। কিন্তু শুধু চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করে তো মূল্যস্ফীতি কমানো যাবে না। সরবরাহ বাড়াতে হবে, কিন্তু সরবরাহ কোত্থেকে বাড়বে? ছোট-মাঝারি শিল্প ঋণ পাচ্ছে না।

    ওদিকে কৃষিক্ষেত্রেও নানা জটিলতা। আইএমএফ এসে আবার বলছে, প্রণোদনা কমিয়ে দাও, ভর্তুকি কমিয়ে দাও। এগুলো তো নেতিবাচক দিক। গতানুগতিক মূল্যস্ফীতি যদি চাহিদাভিত্তিক বিষয়ের ওপর জোর দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে চাই, তবে তো মূল্যস্ফীতি কমবে না।

    আইএমএফ বহুদিন ধরে বলছে, সংস্কার করো। তারপর বলছে, ব্যাংক খাত ঠিক করো। খেলাপি ঋণ নিয়ে তেমন উচ্চবাচ্য করছে না এখন। খেলাপি ঋণ বাড়ছে। তারপর মুদ্রাপাচার, দুর্নীতি—এগুলো নিয়ে আইএমএফ অনেকটা নিশ্চুপ। বিভিন্ন দেশে আমাদের অভিজ্ঞতায় আইএমএফকে দেখেছি, আফ্রিকায় এবং লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে গিয়ে গতানুগতিক কথাবার্তা বলেছে। অর্থ দিয়েছে, কিন্তু সেই অর্থে তেমন কোনো লাভ হয়নি। আইএমএফের ব্যাপারটা আমার মনে হয়, মূল সমস্যায় যাচ্ছে না। ইদানীং রিজার্ভে একটা টার্গেট দেওয়া হলো, বাংলাদেশ ব্যাংক পরিপূর্ণ করেনি। টার্গেট কমিয়ে দেওয়া হলো।

    আর এখানে আইএমএফের উচিত ছিল কেন রিজার্ভ বাড়াতে পারেনি, কেন ইনফ্লো বাড়াতে পারেনি, কেন ফরেন ইনভেস্টমেন্ট বাড়াতে পারেনি, ফরেন পোর্টফোলিও ইনভেস্টমেন্ট বাড়াতে পারেনি, কেন এক্সচেঞ্জ রেট রেশনাইলাইজ করতে পারেনি—সেগুলো সম্পর্কে আরো গভীরভাবে পর্যালোচনা করা। আইএমএফের লোকজন আমলাতান্ত্রিক নিয়মে চলে। তারা রুটিনমাফিক কাজ করে। তাদের কাজ টাকা দেওয়া। পৃথিবীর অনেক দেশে আলটিমেটলি দেখা গেছে, আইএমএফের সাহায্য নেওয়া সত্ত্বেও হাইলি পুওর ইনডেটেড কান্ট্রি (এইচপিআইসি) অত্যন্ত দরিদ্র ঋণনির্ভর দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। ওদের বলে, তোমরা ঋণের সুদ মওকুফের জন্য অনুরোধ করো। বাংলাদেশেও কিন্তু বলা হয়েছিল আমার সময়ে এবং এর আগেও। বাংলাদেশ ‘না’ বলেছে। বাংলাদেশ বৈদেশিক ঋণ শোধ করার বিষয়ে কোনো দিন খেলাপি হয়নি। এটা কিন্তু বাংলাদেশের একটা গৌরবের বিষয়।

    এখন আমরা দেখছি, বাংলাদেশ বৈদেশিক ঋণ নেওয়া বাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা যেন ঋণের ফাঁদে না পড়ি। এখন তো ঋণনির্ভর হয়ে যাচ্ছে সব। মেগাপ্রজেক্ট, ইমপোর্ট, জ্বালানি; এখন দেখলাম বাজেটের জন্য চীনের কাছ থেকে সাহায্য চাইছে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থা থেকে চাইছে। এটা তো আমাদের জন্য বোঝা হয়ে যাবে। দ্বিতীয়ত, আমাদের প্রবৃদ্ধি এবং আমাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের জন্যও এটা খুব বেশি
    সহায়ক হবে না।

    একটা উদাহরণ দিই, আর্জেন্টিনার মতো একটা দেশ ৪০ বছর ধরে আইএমএফের প্রগ্রামে আটকে আছে। পাকিস্তানও একটা উদাহরণ। শুধু আইএমএফের টাকাই নিয়েই যাচ্ছে। ওদের উন্নতি হচ্ছে না। আমরা আবার কি অনুরূপ ফাঁদে পড়ে গেলাম? আমাদের একটা সাহসী
    সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

    সব শেষে বলি, আমাদের সংস্কারগুলো করতে হবে। ব্যাংকিং সেক্টরে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে সংস্কার, এগুলো খুব কঠিনভাবে করতে হবে। এমনকি আমি মনে করি, প্রকল্প প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে খুব কঠিনভাবে সংস্কার করতে হবে। ভালো দক্ষ লোকের কাছে এগুলোর দায়িত্ব দিতে হবে। দক্ষ লোকের অভাবে এবং বাস্তবায়নে নিষ্ঠা ও দক্ষতার অভাবে বাংলাদেশ এই অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে।

    প্রথমত হলো ঋণখেলাপি বা যারা ঋণের টাকা দিতে পারে না বা সরকারি দায় শোধ করতে পারে না, তাদের কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না। ঋণের জন্য ছাড়; কারো যদি সরকারের কাছে কিছু পাওনা থাকে, সেটার জন্য ছাড় দেওয়া যাবে না। এসব ক্ষেত্রে কঠিন পদক্ষেপ নিতে হবে। ছাড় দেওয়ার জন্য কোনো রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক চাপ দেওয়া সমীচীন হবে না।

    দ্বিতীয়ত , রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকতে হবে। নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা; যেমন—বাংলাদেশ ব্যাংক, রেগুলেটরি এক্সচেঞ্জ কমিশন হোক, বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট অথরিটি ডেভেলপমেন্ট (বিডা) হোক, এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরো বা অন্য যেকোনো নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা অথবা উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাকে কোনো রকম চাপ দিলে কিংবা রাজনৈতিক বা আমলাতান্ত্রিক চাপ দিলে তারা দক্ষতার বা সততার সঙ্গে কাজ করতে পারবে না। অতএব এই জিনিসগুলো যদি আমরা পরিপালন না করি, তাহলে সামনের দিকে যেতে পারব না। বাজেট আসছে এবং বাজেট ২০২৪-২৫-এ বাস্তবতাগুলো খুব যত্নসহকারে নিতে হবে। আমাদের ভবিষ্যত্যাত্রায় কৌশলনীতি এবং কৌশলগুলো একেবারে খুব বাস্তবজনিত ও কল্যাণমুখী হতে হবে।

    লেখক : সাবেক গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক অধ্যাপক, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়

    বিআলো/শিলি

    Jugantor Logo
    ফজর ৫:০৫
    জোহর ১১:৪৬
    আসর ৪:০৮
    মাগরিব ৫:১১
    ইশা ৬:২৬
    সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১

    আর্কাইভ

    October 2024
    M T W T F S S
     123456
    78910111213
    14151617181920
    21222324252627
    28293031