বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা, চালকদের ডোপ টেস্ট একান্ত জরুরি
সম্পাদকীয়: নানা ব্যবস্থা নেওয়ার পরও প্রতিদিনই দেশজুড়ে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রকাশিত মাসিক দুর্ঘটনার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সারা দেশে গত মার্চে ৫৫২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫৬৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে অন্তত এক হাজার ২২৮ জন।
পত্রিকায় প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, সারা বছর যতসংখ্যক মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়, তার প্রায় সাড়ে ৭ শতাংশের মৃত্যু হয় শুধু ঈদের সময়।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত তিন ঈদুল ফিতরে মোট ৯৯৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় এক হাজার ৬৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই সময়ে ঈদুল আজহায় ৭৮৬টি দুর্ঘটনায় ৭৭০ জনের প্রাণ ঝরেছে সড়কে। গত মঙ্গলবার ফরিদপুরসহ সাত জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঈদের দিনই সারা দেশে ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
গতকাল বুধবার ঝালকাঠিতে একটি সিমেন্টবোঝাই ট্রাকের চাপায় দুমড়েমুচড়ে গেছে একটি প্রাইভেট কার ও তিনটি অটোরিকশা। এ ঘটনায় ১৪ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে অন্তত ১২ জন। এ ছাড়া দেশের তিন জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে আরো চারজন।
সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানিকে শুধুই দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। দেশের সড়ক-মহাসড়কে এমন অনেক দুর্ঘটনা ঘটে, যেগুলোকে দুর্ঘটনা না বলে হত্যাকাণ্ড বলা যায়। অনেক দুর্ঘটনাই চালকের কারণে ঘটে থাকে। অনেক চালক রাত-দিন গাড়ি চালান। অত্যধিক ক্লান্তি এবং গাড়ি চালাতে চালাতে ঘুমিয়ে যাওয়ার কারণেও অনেক দুর্ঘটনা ঘটে।
লাইসেন্সহীন অদক্ষ চালকের হাতে, এমনকি অপ্রাপ্তবয়স্ক চালকের হাতে গাড়ির চাবি তুলে দেওয়া হয়। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশের প্রায় ৪০ শতাংশ চালকের বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। আমাদের দেশে চালকদের আরেকটি বড় সীমাবদ্ধতা হচ্ছে প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকা। চালকদের মাদকাসক্তিও সড়ক দুর্ঘটনার বড় কারণ।
মাদকাসক্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো বন্ধে চালকদের ডোপ টেস্ট করানোর ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সেই নির্দেশনা কি মেনে চলা হচ্ছে? সেই সময়ে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ থেকে জানানো হয়েছিল চালকরা মাদকাসক্ত কি না, তা রাস্তায়ই পরীক্ষা করা হবে। পরীক্ষায় কোনো চালক ধরা পড়লে তাঁকে সরাসরি জেলে পাঠানো হবে। চালকদের সেই ডোপ টেস্ট কত দূর?
সড়ক দুর্ঘটনার আরেকটি বড় কারণ ফিটনেসহীন যানবাহন। সড়ক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, বেপরোয়া গতি, চালকের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা, বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা ইত্যাদি কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে।
আমরা চাই, সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সব ব্যবস্থা নেওয়া হোক। চালকদের ডোপ টেস্ট করে প্রয়োজনে নতুন ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া হোক।
বিআলো/শিলি