বিয়ের পর স্বামীকে স্বজনদের থেকে আলাদা করার প্রবণতা কেন?
শারমিন সুলতানা রিমি
বিয়ের পর বেশিরভাগ মেয়েদের মধ্যে একটা জিনিস লক্ষ করা যায় সেটা হলো, তার স্বামীকে স্বামীর দিকের আত্মীয় স্বজন থেকে আলাদা করার প্রচেষ্টা এবং যৌথ পরিবার ভেঙে নিজের এবং ছোট পরিবার তৈরি করার মানসিকতা।
আমি বলছিনা, সবার শ্বশুর বাড়ির লোকই ভালো হয়, কারো কারো এমন অবস্থা হয় যে, শ্বশুর বাড়িটা জেলখানায় পরিণত হয়ে যায়, সেখানেও কিন্তু ঐ একজন নারীই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দায়ী থাকেন। কেননা, তার মাথায় এই বিষয় টা ঘুরপাক খেতে থাকে, তার এত দিনের সংসারে কেউ উড়ে এসে জুড়ে বসেছে কিংবা তার ছেলে পর হয়ে গেছে। বেশিরভাগ মেয়ের কাছেই তাদের শাশুড়ির চেয়ে শশুর মশাই প্রিয়? কিন্তু কেন? কারন এটাই. অথচ শশুরের থেকে শাশুড়ী প্রিয় হবার কথা ছিলো, কেননা দিনের বেশিরভাগ সময় বউ- শাশুড়িই একসাথে থাকেন, একে অপরকে কাজে সাহায্য করেন।
আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, আধিপত্য নিয়ে দন্দ্ব।ছেলে শাশুড়ীর রান্নার প্রশংসা করলে বউয়ের কষ্ট হয়, আবার বউয়ের রান্নার প্রশংসা করলে শাশুড়ীর চিন্তা, আমার পোলারে তাবিজ করছে ঠিক এমন। আবার কিছু সংসারে শাশুড়ি ফেরেশতার মত বা নীরিহ গোছের হলেও এর ভিন্ন রূপ খেয়াল করা যায়, যেমন টা হলো, যৌথ পরিবার ভেঙে ফেলার প্রচেষ্টা, একক ভাবে আধিপত্য বিস্তারের মানসিকতা ও স্বামী বাড়ির আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে স্বামী কে দূরে রাখার প্রবনতা। এই প্রবণতা কেন?
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লক্ষ করলে দেখা যায়, সেই মানুষ টার বাবা মায়ের পরিবার টাও ঠিক একক পরিবার। তারাও যৌথ পরিবারে বড় হয়নি, খোঁজ নিলে দেখা যাবে, তাদের পরিবারে মায়ের দিকের আত্মীয় স্বজনদের প্রভাব বেশি, তারা সেটা দেখেই বড় হয়েছে বা অভ্যস্ত। কারো সাথে রুম শেয়ার করে থাকেনি কিংবা যৌথ পরিবারে একটা মিস্টি ব্যাপার যে আছে, “খাবার কম থাকলে, ভাগাভাগি করে খাওয়া,” সেটা সে কখনো করেনি।মোট কথা সে কখনো কোন কিছুই “শেয়ার” করেনি বা অভ্যস্ত না। সেখান থেকেই তার আধিপত্য বিস্তার ও স্বার্থপর মানসিকতা তৈরী হয়েছে। একটা মানুষ কখনো একা বেঁচে থাকতে পারেনা, তাতে সে যতই সম্পদশালী কিংবা ক্ষমতাবান হোক না কেন!
নিজের দিকের ও স্বামীর দিকের, দু দিকেরই পরিবার ও আত্মীয় স্বজনের প্রয়োজন আছে এবং তা মেইনটেইন করা জরুরী। কোনো দিকের পরিবারের সদস্য এবং স্বজনই ফেলনা নয়। সেটা শশুরবাড়ি এবং বউয়ের বাড়ি দুপক্ষরই মাথায়ই রাখা উচিত। বউয়ের পরিবারের সদস্য এবং স্বজনকেও যেমন মূল্যায়ন করা উচিত ঠিক তেমনটাই বউয়েরও উচিত শশুরবাড়ির দিকের আত্মীয় স্বজন ও পরিবারের সবাই কে মূল্যায়ন করা। আত্মীয় স্বজন ছাড়া, পরিবারের মানুষ গুলি ছাড়া, বেঁচে থাকার মানসিকতা মনে স্থান না দেয়াই যুক্তি যুক্ত। কেননা, মানুষের জীবনে “প্রয়োজন” জিনিস টা কখনো শেষ হয় না এবং মহান আল্লাহ তায়ালা নিজে বলেছেন,
“আত্মীয়তার মধ্যে সম্পর্ক ছিন্নকারী জাহান্নামী”
সুতরাং এই ধরনের মানসিকতা দূর করতে হবে। পরিশেষে বলবো, মানুষ কখনো একা সুখী হতে পারেনা। সবার সাথে থেকে এবং সবাইকে ভালবেসে সুখী হতে হয়। কেননা, জীবনে প্রতিটা মানুষ কে প্রয়োজন। কাউকেই তুচ্ছ মনে করা উচিত নয়।কখনো কখনো তুচ্ছ মানুষগুলিকেও কোন না কোন কাজে দরকার পরে, যেমন টা সেই ছোট্ট ইদুর টাকে জালে বন্দি থাকা বনের রাজা সিংহের দরকার পরেছিলো।
গল্পের নৈতিকতা: মানুষ একা থাকতে পারে না। আর সে কখনো একা সুখী হতে পারে না। মাঝে মাঝে কিছু কাজের জন্য তুচ্ছ মানুষের প্রয়োজন হয়, ঠিক সেই ছোট্ট ইঁদুরের প্রয়োজন ছিল বনের রাজা সিংহের।
শারমিন সুলতানা রিমি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ সরকারি তিতুমীর কলেজ, ঢাকা।