পর্যটনের মেয়াদোত্তীর্ণ প্রকল্প সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে
সম্পাদকীয়: পর্যটন খাতে এশিয়ার দেশগুলো দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা এই অপার সম্ভাবনাময় খাতটিকে অবহেলা করে চলেছি। পর্যটনের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সমন্বয়হীনতা। অন্যদিকে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, পর্যটনকেন্দ্রগুলোর দুর্বল অবকাঠামো এবং খাতটিতে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ না হওয়ার বিষয়টি তো আছেই। আর এসব কারণেই বিকশিত হতে পারছে না পর্যটন খাত। অথচ সব সময় বলা হয়ে থাকে যে দেশে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম খাত হতে পারে পর্যটন।
পৃথিবীর বহু দেশের সমুদ্রসৈকত নেই, ম্যানগ্রোভ বন নেই। এত নদী, পাহাড়, ঝরনা, ঐতিহ্যবাহী মসজিদ-মন্দিরেরও দেখা মেলে না অনেক দেশে। সেসব ভূখণ্ডের মানুষের ভ্রমণের অন্যতম কেন্দ্র হতে পারত বাংলাদেশ। যথেষ্ট পর্যটন স্পট থাকার পরও সুযোগ কাজে লাগাতে পারছি না আমরা।
কেন?
কালের কণ্ঠে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, বেশ কিছু পর্যটন এলাকার উন্নয়নে কয়েকটি প্রকল্প নেওয়া হলেও বছরের পর বছর ধরে সেগুলো ধুঁকছে। সরকার বরাদ্দ দিলেও খরচ করতে না পারায় প্রতিবছরই বরাদ্দের বড় অংশ ফেরত যাচ্ছে।
যেমন- নোয়াখালীর হাতিয়া ও নিঝুম দ্বীপ এলাকায় পর্যটনকেন্দ্র নির্মাণে ২০১৮ সালে ৪৯ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যয়ে হাতিয়া ও নিঝুম দ্বীপ পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন পেলেও ছয় বছরে ১০ শতাংশ কাজও হয়নি। চলতি অর্থবছরে প্রকল্পটির আওতায় চার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও খরচ করতে না পারায় ১০ লাখ টাকা রেখে বাকিটা ফেরত নেওয়া হয়েছে।
দেশের অভ্যন্তরে পর্যটন আকর্ষণীয় এলাকায় ট্যুর পরিচালনার লক্ষ্যে ২০২১ সালে ২২৭ কোটি ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ট্যুরিস্ট কোচ সংগ্রহ প্রকল্প নেওয়া হয়। তবে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়েও নির্দিষ্ট সময়ে কোচ কিনতে পারেনি পর্যটন করপোরেশন। চলতি অর্থবছরে কোচ কেনার জন্য ২৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হলেও কেনা যায়নি কোচ। ফেরত নেওয়া হয়েছে টাকা। চট্টগ্রামের পারকিতে পর্যটন সুবিধা প্রবর্তনে ২০১৭ সালে ৭১ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পটিতে এখনো অর্ধেক কাজই সম্পন্ন হয়নি।
পঞ্চগড়ে পর্যটনকেন্দ্র নির্মাণে ২০১৮ সালে ৩৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প নেয় পর্যটন করপোরেশন। ছয় বছর পেরোলেও এখনো প্রকল্পটিতে কোনো কাজই হয়নি। কয়েক বছর ধরে তেমন লাভও দেখছে না পর্যটন করপোরেশন।
সংস্থাটির প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১০ লাখ টাকা লোকসান হয়। ২০২০-২১ অর্থবছরে পাঁচ কোটি ২৫ লাখ টাকা লোকসান হয়। আর ২০২১-২২ অর্থবছরে লোকসান হয় চার কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এক কোটি ৩০ লাখ টাকা লোকসান দেখিয়েছে সংস্থাটি। বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও বৈশ্বিক পর্যটন খাতে বাংলাদেশের অবস্থান তলানিতে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পূর্ণাঙ্গ মহাপরিকল্পনা ছাড়া পৃথিবীর কোনো দেশই পর্যটন খাতে পরিকল্পিত উন্নয়ন করতে পারেনি। পর্যটন খাতের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে। পাশাপাশি নিশ্চিত করতে হবে সাধারণ ও পর্যটন অবকাঠামোসহ প্রয়োজনীয় উন্নয়নকাজ এবং পর্যটকদের সেবাপ্রাপ্তি।
বিআলো/শিলি