লিবিয়া থেকে এলো আট মরদেহ, বন্ধ করতে হবে মানবপাচার
সম্পাদকীয়: বাংলাদেশে এখনো বেকার তরুণ ও যুবকের সংখ্যা অনেক। আর এই সুযোগই কাজে লাগায় দেশি-বিদেশি মানব পাচারকারী চক্র। তারা উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতিবছর শত শত তরুণ-যুবকের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। হাতিয়ে নেয় বিপুল পরিমাণ অর্থ। অনেকের
মৃত্যুও হয়। আবার অনেককে জিম্মি বানিয়ে তাদের পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করার ঘটনাও ঘটে। একদিকে ভোগবিলাস ও প্রাচুর্যের হাতছানি; অন্যদিকে জীবনের রূঢ় কঠিন বাস্তবতা। এরই মধ্যে কিছু মানুষ জীবন বাজি রেখে বেঁচে থাকার উপায় খোঁজে।
সামান্য উন্নত জীবনের আশায় নিজের পাশাপাশি পরিবারকেও ঠেলে দেয় প্রচণ্ড ঝুঁকির মধ্যে। সেটি যেমন দেখা গেছে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার ক্ষেত্রে, তেমনি দেখা যাচ্ছে লিবিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে নৌকায় করে ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে ইউরোপে যাওয়ার ক্ষেত্রেও। আর তার মূল্যও দিতে হচ্ছে বহু মানুষকে। প্রায় নিয়মিতভাবে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটছে। সাগরে ডুবে মারা যেতে হচ্ছে।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি লিবিয়া থেকে একটি নৌকায় ইতালির উদ্দেশে যাওয়ার পথে তিউনিশিয়া উপকূলে ডুবে মারা যান বাংলাদেশের আট নাগরিক। নিহতদের মধ্যে পাঁচজন মাদারীপুরের এবং তিনজন গোপালগঞ্জের।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি শেষ রাতের দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। লিবিয়ার জুয়ারা উপকূল থেকে ইউরোপ যাত্রাপথে ৫২ জন যাত্রী এবং একজন চালকসহ নৌকাটি তিউনিশীয় উপকূলে ডুবে যায়। এরপর জীবিত উদ্ধার করা হয় ৪৪ জনকে, ডুবে মারা যান ৯ জন। জীবিত উদ্ধার হওয়াদের মধ্যে ২৭ জন বাংলাদেশি, আটজন পাকিস্তানি, পাঁচজন সিরিয়ার ও চারজন মিসরের। নিহত ৯ জনের মধ্যে আটজন বাংলাদেশি এবং অপরজন পাকিস্তানের নাগরিক বলে শনাক্ত করা হয়।
নিহতদের একজনের বাবা বিমানবন্দর থানায় সাতজনকে আসামি করে মামলা করেছেন। পুলিশ জানিয়েছে, মামলা করার পরপরই প্রধান আসামিসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অভিযোগে বলা হয়েছে, এই চক্র উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাচার করে এই তরুণদের।
এমন শোকাবহ ঘটনা এটাই প্রথম নয়, এর আগেও অনেক ঘটেছে। ভূমধ্যসাগর কিংবা মরুভূমিতে না খেতে পেয়েও অনেক বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু কোনোক্রমেই এমন দুঃখজনক পরিণতি রোধ করা যাচ্ছে না কেন? সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এসব প্রতিরোধের ক্ষেত্রে আমাদের আইনি ব্যবস্থা অপ্রতুল।
দেশের আনাচকানাচে ছড়িয়ে থাকা পাচারকারীদের সব নেটওয়ার্ক ভেঙে দিতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীগুলোর তৎপরতা আরো বাড়াতে হবে। আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ থেকে এই জঘন্য অপরাধের অবসান হোক।
বিআলো/শিলি