যাত্রাবাড়ীতে জাগো নিউজ ও স্বাধীন সংবাদ পত্রিকার ৩ সাংবাদিকের উপর হামলা
ইবনে ফরহাদ তুরাগঃ সাম্প্রতিক সময়ে গণমাধ্যম কর্মীদের উপর চড়াও হয়ে উঠেছেন ওয়ারী বিভাগের মুখোশধারী সন্ত্রাসীরা। তথ্য অধিকার আইনে সাংবাদিকদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করাটা যেনো মেনে নিতেই নারাজ তারা। এবার তাদের অপশক্তির দাপটে ৯৯৯-এ ফোন দিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি সাংবাদিকদের।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ১৫ দিনের ব্যবধানে এবার তৃতীয়বারের মতো ওয়ারী বিভাগের আওতাধীন এলাকায় অতর্কিতে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছেন জাগো নিউজ ২৪ ডটকমের সিনিয়র রিপোর্টার ইসমাইল হোসাইন রাসেল, দৈনিক স্বাধীন সংবাদ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক আনোয়ার হোসেন আকাশ এবং দৈনিক স্বাধীন সংবাদ পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার আহমেদ নাহিম।
গতকাল ৬ মে (সোমবার) বিকেলে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানাধীন দনিয়া কলেজের পাশে অন্বেষা ফ্যান ফ্যাক্টরি সংলগ্ন আবিদ লাইট ফ্যাক্টরিতে তথ্য সংগ্রহের কাজে গেলে এই ঘটনা ঘটে।
ঘটনাসূত্রে জানা যায়, আবিদ লাইট ফ্যাক্টরিতে কাজ করতো রেজাউল নামের এক কর্মচারী। ফ্যাক্টরির কর্তৃপক্ষের লোকজন রেজাউলের বেতন আটকে দেয়। তা চাইতে গেলে তার উপর নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়। এমন অভিযোগের সত্যতা জানতে সাংবাদিকরা ওই ফ্যাক্টরিতে গেলে তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে কর্তৃপক্ষ। এ সময় কথায় তর্ক-বিতর্কের এক পর্যায়ে সাংবাদিকের উপর হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। হামলার পর তাদের রোষানল থেকে বাঁচতে সন্ত্রাসীদের কাছে ষ্ট্যাম্প করে লিখিতভাবে দিয়ে আসতে হয় সাংবাদিকদের। এ ব্যাপারে হামলাকারীদের সহযোগীতা করে পুলিশ।
হামলার স্বীকার হওয়া সাংবাদিকদের অভিযোগ, ‘হামলার আশংকা বুঝতে পেরে বাধ্য হয়ে তারা ঘটনাস্থল থেকে ৯৯৯ এ পুলিশকে ফোন দিয়ে সাংবাদিকদের উদ্ধার করার কথা বললেও, পুলিশ করে এর বিপরীত’। পুলিশ দেরি করে ঘটনাস্থলে আসে, এর আগেই প্রচুর লোক জমে যায় এবং সাংবাদিকদের মারধর করে সন্ত্রাসীরা। এ সময় হামলার ঘটনা আড়াল করতে জোরপুর্বক ৩০০ টাকার ষ্ট্যাম্পে সাইন নিয়ে সন্ত্রাসীদের সাথে আপোষ মিমাংশা করতে ব্যস্ত হয়ে পরেন যাত্রাবাড়ী থানার এস.আই রফিক। তারা আরও জানান, এই ঘটনায় পুলিশের ভুমিকা ছিলো সাংবাদিকদের বিপক্ষে। তারা আহত সাংবাদিকদের উদ্ধার করে হাসপাতাল নিতেও অস্বীকৃতি জানায় ও সন্ত্রাসীদের ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে সহযোগীতা করে।
হামলার পর দৈনিক স্বাধীন সংবাদের প্রকাশক ও সম্পাদক আহত সাংবাদিকদের দ্রুত ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে যান ও ফেসবুক লাইভে এসে ঘটনার বিবৃতি প্রকাশ করেন। সেই ভিডিও ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় জার্নালিষ্ট ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল, বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স কাউন্সিল সহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন ও কদতলী থানা প্রেসক্লাব ইতিমধ্যে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।
দৈনিক স্বাধীন সংবাদ পত্রিকার সম্পাদক আনোয়ার হোসেন আকাশ বলেন, আমি তখন জাতীয় প্রেসক্লাবে ছিলাম, যখন আমি ঘটনা জানতে পারি, এবং শুনতে পাই আমাদের সাংবাদিকদের সাথে ঐ ফ্যাক্টরির মালিকগন অকথ্য ভাষায় গালাগালি করছে। তখন আমি ওদেরকে বলি ৯৯৯এ ফোন দেওয়ার জন্য। পুলিশ আসতে দেরি হয়। তখন আমি জাতীয় প্রেসক্লাবে থেকে মোটরসাইকেলে দ্রুত বেগে আবিদ লাইট কারখানায় চলে যাই ও কারখানার ম্যানেজারের সাথে আলোচনা চলাকালে দেখি ৫০ থেকে ৬০ জন বহিরাগত সন্ত্রাসী এসে জাগো নিউজের স্টাফ রিপোর্টার ইসমাইল হোসেন রাসেল এর উপর অতর্কিত হামলা চালায় ও ব্যাপক মারধর করে। কিছুক্ষণ পর আসে পুলিশ।
সম্পাদক আকাশ বলেন, আমি সে সময় যাত্রাবাড়ী থানার এস.আই রফিককে বারবার অনুরোধ করি, আমাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান, নিয়ে চলেন, কিন্তু অদৃশ্য কারণে এসআই রফিক বারবার বলেন বিষয়টি এখানেই সমাধান করতে হবে ,পরে বাধ্য হয়ে জীবন বাঁচাতে কারখানার লোকদের কথা মতো এসআই রফিকের সামনে ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে লিখতে বাধ্য হই যে, এই কারখানায় কোনো মারামারী হয় নাই, কথা কাটাকাটি হয়েছিল, বিষয়টি স্থানীয় গন্যমান্য ব্যাক্তির সামনে সমাধান হয়েছে। এই লিখিত দেওয়ার পর এস আই রফিক সাংবাদিকদেরকে কারখানার বাইরে নামিয়ে দিয়ে আবার ঐ কারখানায় যায়। বর্তমানে সাংবাদিকরা ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসধীন অবস্থায় আছে। জাগো নিউজের স্টাফ রিপোর্টার, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটের সদস্য ইসমাইল হোসেন রাসেলের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এই ঘটনায় পরদিন সকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় ৮ জন মুল আসামী ও ১০-১২ জন অজ্ঞাত আসামী করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। যার মামলা নং- ২৫, তারিখঃ ৭/৫/২৪। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এই মামলায় রেজাউল ও হাসান নামে ২ জন আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
বিআলো/নিউজ